পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
২২৮
ঈশানচন্দ্রমাণিক্য

স্কন্ধে ১১ লক্ষ টাকার ঋণভার রাজমুকুট ধারণ করিবার সঙ্গে সঙ্গেই ন্যস্ত হইল। ইহাতে রাজত্বের প্রকৃত সুখ তাঁহার ভাগ্যে ঘটিল না। রাজপরিবারের সম্পর্কিত বলরাম হাজারির হস্তে রাজ্য ও জমিদারীর ভার অর্পিত হইল। হাজারি নিতান্ত কঠোর প্রকৃতির লোক ছিলেন, তাঁহার কঠোর শাসনে আয় বৃদ্ধি পাইবে এবং ঋণ দেওয়া সহজ হইবে এরূপ ভাবিয়া মহারাজ শান্তি পাইয়াছিলেন কিন্তু ঘটনা দাঁড়াইল অন্যরূপ। বলরাম ও তাঁহার ভ্রাতা শ্রীদামের কঠোর হস্তচালনায় চতুর্দ্দিকে অসন্তোষের বহ্নি চাপা ভাবে জ্বলিতে লাগিল, পরিশেষে একদিন আত্মপ্রকাশ করিল। পরীক্ষিৎ ও কীর্ত্তি নামে দুইজন পার্ব্বত্য সরদার কুকি সৈন্য লইয়া গভীর রজনীতে বলরাম ভবন ঘেরাও করিল। বলরাম পলায়ন করে কিন্তু শ্রীদাম কীর্ত্তির হস্তে হত হন। মহারাজ ঈশানচন্দ্র বলরামের শত্রুগণকে বন্দীশালায় আটক করিলেন।

 কিন্তু বলরামের প্রকৃতি পরিবর্ত্তন হইল না। বলরাম ইশানচন্দ্রমাণিক্যকে বধ করিবার জন্যও ষড়যন্ত্র চালাইতে লাগিলেন। সর্দ্দার খাঁ, ছোবান খাঁ প্রভৃতির সহিত পরামর্শ চলিতে লাগিল। বলরামের অভিপ্রায় ছিল যুবরাজ উপেন্দ্রচন্দ্রকে সিংহাসন প্রদান করা। কিন্তু ষড়যন্ত্র বাহির হইয়া পড়িল এবং ঈশানচন্দ্র বিপক্ষ নেতৃগণকে ধৃত করিয়া রাজ্য হইতে বাহির করিয়া দিলেন। এইরূপ গুরুতর ষড়যন্ত্রের ফলে কাহারও গুরুদণ্ড না হওয়া মহারাজের মহত্ত্বের পরিচায়ক সন্দেহ নাই।