পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
২৩
ত্রিলোচন ও হেড়ম্ব-রাজ

রূপে তিনি ছিলেন কন্দর্প তুল্য, যুদ্ধে অগ্নিতুল্য, ক্ষমায় পৃথিবী সদৃশ, বাক্যে বৃহস্পতিসম। নানা যন্ত্র শিক্ষায় তাঁর ছিল অসাধারণ জ্ঞান, বিদেশাগত ব্রাহ্মণের নিকট হইতেও শাস্ত্র পাঠে তিনি জ্ঞান লাভ করেন। তাঁহার বৈষ্ণব চরিত্র ও সাধুর আচারে সকলের মন মোহিত হইয়াছিল।

 ত্রিপুরের মৃত্যুর পর পার্শ্বস্থ যে হেড়ম্বরাজ্যে (কাছাড়) প্রজারা ভিক্ষা করিতে যাইত সেই দেশে ত্রিলোচনের সুখ্যাতি ছড়াইয়া পড়িল। হেড়ম্বরাজ মনে মনে ভাবিলেন এমন পাত্রে যদি কন্যা দিতে পরিতাম, আমি ত বুড়া হইয়া পড়িতেছি! আশে পাশে যে সব রাজ্য তাহারা ম্লেচ্ছ, কোচ ইত্যাদি। আমি ত পুত্রহীন, আমার অভাবে এ রাজ্য কে দেখিবে? যদি এমন সোনার চাঁদ ছেলে পাই তবে বুড়া বয়সে শান্তি পাইতে পারি। এইরূপ ভাবিয়া এক ব্রাহ্মণকে বিবাহের দূতরূপে হেড়ম্বরাজ ত্রিপুরা রাজ্যে পাঠাইয়া দেন।

 বিবাহের দূত আসিয়া মন্ত্রিগণের নিকট হেড়ম্বরাজের ইচ্ছা জানাইতেই সকলের আনন্দের সীমা রহিল না। এ বিবাহে সকলেরই একমত, এরূপ উত্তম প্রস্তাব ছাড়া উচিত নয়। দূত হেড়ম্বরাজ্যে ফিরিয়া গেলেন। হেড়ম্বরাজ কন্যার বিবাহের দিন স্থির করিলেন। দেখিতে দেখিতে শুভদিন ঘনাইয়া আসিল। হেড়ম্বরাজ্য বিবাহের সাজসজ্জায় মহা আড়ম্বরে শোভিত হইল। এদিকে ত্রিপুরেশ্বর ত্রিলোচন, মন্ত্রী সেনাপতি পাত্রমিত্র সভাসদ লইয়া হেড়ম্বরাজ্য উদ্দেশে যাত্রা করিলেন।