পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
২৪
ত্রিলোচন ও হেড়ম্ব-রাজ

শত শত হাতী ঘোড়ায় শোভাযাত্রা চলিল, অগণন কিরাত সেনায় শোভাযাত্রা অতি দীর্ঘ হইয়া পড়িল। দূর হইতে দেখিয়া মনে হইল যেন এক যুদ্ধের অভিযান চলিয়াছে। পথে দিন কয় কাটিয়া গেল, তারপর হেড়ম্বরাজ্য মিলিল। একদিন প্রভাতে দুই রাজার সাক্ষাৎ হইল। ত্রিলোচনকে দেখিয়া হেড়ম্বরাজ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাইলেন। রূপে ভুবন আলো করিতেছে এমন বর আসিয়াছে দেখিয়া রাজ্যে আনন্দের আর সীমা ধরে না। হেড়ম্বরাজ কহিয়া উঠিলেন—আমার বড় ভাগ্য যে শিব-পুত্র ত্রিলোচন আমার রাজ্যে আসিয়াছেন।

 ত্রিলোচনের থাকিবার জন্য এক বিপুল শিবির রচনা হইল। সমস্ত লোকজন লইয়া সেই কৃত্রিম ত্রিপুর নগরীতে ত্রিলোচন রাজঠাটে অভ্যর্থনা পাইলেন। শুভদিনে শুভক্ষণে হেড়ম্বরাজার কন্যার সহিত তাঁহার বিবাহ হইল। সাত দিন ধরিয়া মহা উৎসব চলিল—বাদ্যভাণ্ড নৃত্যগীতে সর্ব্বত্র মুখরিত। হেড়ম্বরাজ মঞ্চের উপর বসিয়া অগণিত লোকের ভোজন-আনন্দ দেখিলেন। তারপর বিদায়ের পালা আসিল। এখন রাজকন্যাকে বিদায় দিতে হইবে, হেড়ম্বরাজের চোখে জল আসিল। কন্যাকে বহু যৌতুক দিলেন, কত মূল্যবান বস্ত্র, অলঙ্কার, কত ঘোড়া, কত হাতী, কত দাস দাসী সঙ্গে দিয়া কন্যাকে বিদায় দিলেন। হেড়ম্বরাজ নিজ রাজ্য হইতে কতক দূর কন্যার সঙ্গে চলিয়া আসিলেন তারপর চোখের জলে মেয়ের নিকট বিদায় মাগিয়া রাজ্যে ফিরিলেন।