পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
৫৬

হরি রায়ের পুত্রগণের
বুদ্ধি পরীক্ষা

করিতে পার তবে প্রাণদণ্ড করিব।” এই বলিয়া সেবককে সাবধান করিয়া দিলেন।

 পরদিন রাজা ভোজনে বসিলেন, পুত্রগণকে একটু দূরে পংক্তিক্রমে বসাইলেন। কুমারদের পাতে ভাত দেওয়া হইয়াছে; জ্যেষ্ঠ মুখে গ্রাস তুলিতেই সকলে গ্রাস তুলিলেন। এইভাবে মাত্র পাঁচ গ্রাস অন্ন ভোজন হইয়াছিল এমন সময় রাজা চোখে ইশারা করিলেন। অমনি বাহিরে দাঁড়ান সেবক ত্রিশটি কুকুরকে ছাড়িয়া দিল। একে কুকুরগুলি কাল কিছুই খায় নাই, ক্ষুধায় পেট চু চু করিতেছিল; তার মধ্যে সম্মুখে এতগুলি সোনার থালায় রাশি রাশি অন্ন! কুকুরগুলি এক দৌড়ে ঘরে ঢুকিয়া রাজপুত্রদের থালায় খাইতে চাহিল। কুমারেরা হা হা, হু হু করিলেন বিস্তর, কিন্তু কুকুর কি তাহা বোঝে? তাঁহাদের থালায় কুকুরের মুখ লাগিতেই সতেরটি কুমার পাত্রত্যাগ করিলেন। কিন্তু সর্ব্বকনিষ্ঠ পুত্র রত্ন এক কৌশলে ইহাদের ঠেকাইলেন। দূরে মুঠো মুঠো ভাত ছড়াইয়া দিলেন। কুকুর ঘরের কোণে সেই ভাত চাটিয়া খাইতে লাগিল, এ অবসরে রত্ন বেশ কয়েক গ্রাস খাইয়া ফেলিলেন। এমনি করিয়া ভাত ছড়াইয়া কুকুরগুলিকে দূরে রাখিয়া ছোট কুমার বেশ পেট ভরিয়া খাইয়া উঠিলেন। এদিকে তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভাই সব ক্ষুধার জ্বালায় অবশ্যই রাগিয়া আগুন হইয়া গেলেন। রাজা এই সব দেখিয়া বুঝিলেন কনিষ্ঠ রত্নই বুদ্ধিমান্। একদিন ত্রিপুর-সিংহাসনে যে রত্ন বসিবেন ইহাতে তাঁহার বিন্দুমাত্র সন্দেহ রহিল না।