মনে হইল, পেঁচা কিংবা ওই জাতীয় নিশাচর পাখী হইবে; অন্ধকার এবং দূর বলিয়া শাখার উপর নিদ্রিত প্রাণীটিকে দেখা যাইতেছে না। ছায়াটি আবার দেখা গেল। মাধব এবার বিশেষভাবে লক্ষ্য করিয়াও বাদুড় অথবা অন্য কোনও পাখীর আকৃতির সহিত ছায়াটির সাদৃশ্য খুঁজিয়া পাইল না। বরঞ্চ মানুষের মাথার সহিত উহার যেন অনেকটা মিল আছে। আকাশের গায়ে ছায়া স্পষ্ট হইল; মাধবের মনে হইল, গাছের গুঁড়ির অন্তরালে যেন গলার খানিকটাও সে দেখিতে পাইল। অবশ্য এমন উচ্চে ছায়াটি পরিলক্ষিত হইল, যেখানে সচরাচর মানুষ উঠে না। বার বার ছায়ার আবির্ভাব ও তিরোভাবে মাধবের কৌতূহল অথবা আশঙ্কা অথবা উভয়ই এমনই বাড়িয়া উঠিল যে, সে কাছে গিয়া পরীক্ষা করিতে চাহিল। মাধব প্রথম ভাবের ধাক্কাতেই কাজে নামিয়া যায়; এক্ষেত্রেও পরীক্ষার কথাটা মনে উদিত হওয়া মাত্রই সে নিজে গিয়া গাছের আড়ালে কেহ আছে কি না, তাহা নির্দ্ধারণ করিবে স্থির করিল। বৈঠকখানায় যে ক্ষুদ্র রৌপ্যমণ্ডিত তরবারি ঝুলিতেছিল, তাহা লইয়া নিজেকে সশস্ত্র করিয়া সে সিঁড়ি দিয়া নীচে নামিয়া গেল। পুনয়ায় সে সদর দেউড়ি হইতে গাছটির দিকে ভাল করিয়া চাহিল; দেউড়ি হইতে দেবদারু সারির দূরত্ব বেশি নয়। কিন্তু নির্দ্দিষ্টস্থানে সে কিছুই দেখিতে পাইল না। এদিক ওদিক সন্ধান করিয়াও খোঁজ পাওয়া গেল না। সুতরাং গাছের গোড়া পর্য্যন্ত তাহাকে যাইতে হইল। কিন্তু সেখান পৌছিতে না পৌছিতেই পেঁচার কর্কশ চীৎকারের মত একটা শব্দ তাহাকে চমকাইয়া দিল এবং দেখিতে দেখিতে কঠিন একটা আঘাতে তাহার হাত হইতে কে যেন তরবারিটি কাড়িয়া লইল। এই হঠাৎ আক্রমণকারী কে, বা কোথায় লুকাইয়া আছে, তাহা বুঝিবার পূর্ব্বেই একটা বলিষ্ঠ হাতের বৃহৎ এবং কর্কশ থাবা তাহার মুখের উপর আসিয়া পড়িল এবং সঙ্গে সঙ্গে বিপুলকায় একটি লোক গাছ হইতে মাটিতে লাফাইয়া
পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/১১৪
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
রাজমোহনের স্ত্রী