সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
সতর্ক প্রেম
আমাদের উপন্যাসের নায়কের ভাগ্যে সহসা এরূপ বিপর্য্যয় যখন ঘটিল, (পাঠক, নিশ্চয়ই মাধবকেই এই উপন্যাসের নায়ক বলিয়া বুঝিয়াছেন।) মথুর ঘোষ তখন বিশ্রামসুখমগ্ন, অথবা আরও যথাযথ বর্ণনা করিতে হইলে বলিতে হয়, সে তারার কক্ষে বিশ্রাম করিবার চেষ্টায় ব্যাপৃত ছিল। তাহার অর্দ্ধশায়িত দেহের সন্নিকটে কৌচের উপরই বসিয়া বসিয়া তারা হাতের ক্ষুদ্র সূক্ষ্মকারুকার্য্যমণ্ডিত খস্খস্নির্ম্মিত পাখার সাহায্যে স্বামীর ক্ষুব্ধ আত্মাকে সস্নেহে ও পরম ধৈর্য্যের সহিত ঘুম পাড়াইতে চেষ্টিত ছিল। কিন্তু তাহার চেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত হইতেছিল না, কারণ যদিচ মথুর ঘোষ নীরব ও মুদিতনেত্র অবস্থায় ছিল, ক্ষণে ক্ষণে তাহার বক্ষ ভেদ করিয়া গভীর দীর্ঘশ্বাস বাহির হইয়া তাহার মনের আশঙ্কা-ব্যগ্রতার পরিচয় দিতেছিল; স্বামীর এই ব্যাকুলতার কারণ তারার সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল। সেই নীরবতা ভঙ্গ করিয়া তারাই কথা কহিল।
তারা বলিল, তুমি যে ঘুমোচ্ছ না!
—ঘুম আস্ছে না, ঘুমের সময় তো আমার ঠিক এটা নয়।
—তবে ঘুমুতে এলে কেন? দেখ, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব, আমার আস্পর্দ্ধা ভেবে তুমি যদি রাগ না কর তো বলি।
—কিছু বলবার থাকে তো বলই না!
—তোমার মনে সুখ নেই; যে তোমাকে সত্যিই ভালবাসে, তারও কাছে কি তার কারণ বলতে বাধা আছে?
মথুর চমকিয়া উঠিল, কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলাইয়া লইয়া ব্যাপারটাকে লঘু করিয়া দিবার জন্য হাসিবার ভঙ্গীতে জবাব দিল বটে,