তরুণী হাতের কাজ এক পাশে রাখিয়া অভ্যাগতার সহিত আলাপ করিতে বসিল। অভ্যাগতাও নিজের সংসারযন্ত্রণার কথা এক কাহন করিয়া বলিতে শুরু করিল; আসলে হয়তো সে সকল অনুযোগের কোনও যথার্থ ভিত্তি নাই। তথাপি বলিতে বলিতে তাহার চোখে জল আসিল। কর্দমাক্ত অঞ্চলে নয়নাশ্রু যত মুছে, ততই তাহা উথলিয়া উঠিতে থাকে। শেষে সে প্রায় জাঁকাইয়া কাঁদিবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময়ে ভাগ্যক্রমে শিশুর কালি-মাথা মুখের দিকে তাহার দৃষ্টি গেল, আর কাঁদা হইল না, রমণী হাসিয়া ফেলিল।
এদিকে প্রায় সন্ধ্যা নামিয়া আসিল দেখিয়া আগন্তুকা ঘাটে জল আনিবার জন্য তরুণীকে আমন্ত্রণ করিল। কিন্তু তরুণী রাজি হইল না। অপর কিন্তু নাছোড়বান্দা। শেষে গম্ভীর মুখে নবীনা বলিল, তুই জানিস তে কনকদিদি, আমি কখনও জল আনিতে যাই না।
কনক বলিল, সেই জন্যেই তো যেতে বলি, তুই কেন দিনরাত্তির এই খাঁচায় বন্ধ থাকবি? অন্য বাড়ির বউ ঝি সবাই তো জল আনে।
তরুণী তথাপি অটল; বলিল, ঝগড়ায় কাজ কি কনক! তুই তো জানিস স্বামী আমার ঘাটে যাওয়া পছন্দ করেন না। তাঁকেও তো তুই জানিস?
কনক উত্তর না দিয়া চারিদিকে একবার চকিতে দেখিয়া লইল, কি যেন বলিবে ইচ্ছা করিয়া কিয়ৎকাল নতমস্তকে বসিয়া রহিল। তরুণী প্রশ্ন করিল, কনক, কি ভাবছিস?
কনক বলিল, তোর চোখ থাকলে—
তরুণী ইঙ্গিতে তাহাকে অধিক অগ্রসর হইতে নিষেধ করিয়া বলিল, চুপ, বুঝেছি। কিছুক্ষণ অত্যন্ত চিন্তাকুল চিত্তে সে বসিয়া রহিল, পরে কহিল, চল্, কিন্তু পাপ হবে না তো?
কনক হাসিল, হাসিতে হাসিতে কহিল, আমি ভট্টাচায্যি বামুন নই,