দরজার ভারী হুড়কোটি খুলিয়া দিল। তাহার পর যে ঘরে কয়েদ ছিল, সেই ঘরেই সে ফিরিয়া গেল—তারাকে সঙ্গে যাইতে বলিল। উভয়ে উপবিষ্ট হইলে সে তাহার বন্দী হওয়ার ইতিহাস বলিতে শুরু করিল। সে কিছু গোপন করিল না অথবা বাড়াইয়া বলিবারও চেষ্টা করিল না। তাহার মনে ঘৃণা ও বিরক্তির অন্ত ছিল না এবং এ বিশ্বাসও ছিল যে তারা তাহার স্বামীকে যতই ভালবাসুক তাহার হৃদয়ের পবিত্রতা কিছুতেই তাহার ঘৃণিত ব্যবহারকে সমর্থন করিতে দিবে না। তারা ঘন্ত্রণায় ছটফট করিতে লাগিল, নৈরাশ্যে তাহার মন ভরিয়া উঠিল।
তারা বলিল, তা হ’লে আমি যা খুঁজতে বের হয়েছি তুমি তা নয়, তুমি সবে এই সন্ধ্যায় এখানে এসেছ, কিন্তু যে সন্দেহের বশবর্ত্তী হয়ে আমি এখানে এসেছি, দুদিন আগে সেই সন্দেহের কারণ ঘটেছে।
তারা কেন সেখানে উপস্থিত হইয়াছে, তাহা খুলিয়া বলিল। পাঠককে তাহা বিস্তারিতভাবে বলিবার প্রয়োজন নাই। স্বামীকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখিয়া সে নানা সম্ভব অসম্ভব কল্পনায় নিজে পীড়িত হইয়াছে, কিন্তু স্বামীর চিন্তার কোনই কারণ স্থির করিতে পারে নাই। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিয়াও সে জবাব পায় নাই। সে লুকাইয়া লুকাইয়া স্বামীকে চোরের মত গুদাম-মহলের দিকে যাইতে দেখিয়াছে এবং তাহার বিশ্বাস হইয়াছে যে, কারণ সেখানেই নিহিত। গুদাম-মহলে যেমন করিয়া হউক, প্রবেশ করিয়া অনুসন্ধান করিয়া সে সেই কারণ জানিবে, মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করিয়া ঘুমন্ত স্বামীর বালিশের তলা হইতে চাবি চুরি করিয়া সেখানে উপস্থিত হইয়াছে।
তারা বলিতে লাগিল, সেই চুরি-করা চাবি নিয়ে আমি যখন এই ভীষণদর্শন দেওয়ালের ধারে ধারে এই অন্ধকার পথে আসছিলাম, তখন আমার মনে আশা আকাঙ্ক্ষা ভয় ও নৈরাশ্যের যে দ্বন্দ্ব চলছিল, তা তুমি অনুভবে বুঝতে পারবে, তা বর্ণনা করার সামর্থ্য আমার নেই। কিন্তু