চতুর্থ পরিচ্ছেদ
একটি জমিদার-বংশের উত্থান-পতনের ইতিহাস
বাংলার বহু প্রসিদ্ধ জমিদার-বংশ যে নীচকুলোদ্ভব ইহা নিন্দার কথা হইলেও সত্য।
বংশীবদন ঘোস পূর্ব্ববঙ্গের এক বৃদ্ধ জমিদারের খানসামা ছিল। এই জমিদারের নাম এবং বংশ এখন উভয়ই লোপ পাইয়াছে। প্রথম বিবাহ নিষ্ফল হওয়াতে জমিদারটি বুড়া বয়সে দ্বিতীয় দারপরিগ্রহ করেন। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখিয়া বাঁচা এবং মরা কোনটাই তাঁহার অদৃষ্টে ছিল না। অবশ্য, সন্তান-ভাগ্যের পরেই তিনি যে বস্তুটি এই বৃদ্ধবয়সে সর্ব্বাপেক্ষা কাম্য মনে করিতেন তাহা তাঁহার ভাগ্যে জুটিয়াছিল—একটি যুবতী ও সুন্দরী স্ত্রী তিনি পাইয়াছিলেন। এ কথা সত্য যে তাঁহার দুই জীবনসঙ্গিনীর পরস্পর কলহ-বিবাদে প্রায়ই তাঁহার পারিবারিক শান্তিতে বিঘ্ন ঘটিত, কারণ অধিকবয়স্কা যিনি তিনি সর্ব্বক্ষণ উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করিতেন, যে আগে আসিয়াছে তাহার দাবি আগে, এ বিষয়ে সংশয় থাকিতে পারে না। বৃদ্ধ কিন্তু এ বিষয়ে নিসংশয় হইতে পারেন নাই। গতিক যখন খুবই খারাপ তখন এমন একজন মধ্যস্থ আসিয়া বিচারনিম্পত্তি করিয়া দিলেন যে, কাহারও কিছু প্রশ্ন করিবার রহিল না। বড়র নিঃসংশয় দাবি যথাযথ স্বীকার করিয়া তিনি তাহাকে ইহলোক হইতে অপসারিত করিলেন। বৃদ্ধ এবং তাহার তরুণী ভার্য্যা নিশ্চিন্ত হইলেন বটে, কিন্তু এই ঘটনা যেন বৃদ্ধকে সতর্ক করিয়া দিয়া গেল; তিনি মনে মনে অনুভব করিলেন, তাঁহার ডাক পড়িতেও আর বেশি দিন নাই। পুত্র-মুখ দেখিবার কোনও সম্ভাবনাই আর রহিল না। বৃদ্ধের মন এই ভাবিয়া তিক্ত হইয়া গেল যে, তাঁহার এই বিশাল সম্পত্তি এমন সকল