মানুষকেই সেই পদ দেওয়া যায়, তাহা হইলে এই পদ্ধতিকে আরও উন্নত করা হয়, কারণ, মানুষ-প্রাণীটাই একটা মহত্তর ব্যাপার, ধাতুদ্রব্য অপেক্ষা মানুষের সহিত-নিশ্চয়ই উহার মিল বেশি এবং এই মিল শুধু বাহিরের অবয়বের মিল নহে। এরূপ তর্কের দ্বারা মনকে দৃঢ় করিয়া মৃতের প্রতি শ্রদ্ধাবশতঃও বটে আবার দেবতাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়াও বটে, অনতিকাল মধ্যে সে একজন প্রতিনিধি নির্ব্বাচন করিয়া লইল। বাবুর খানসামা বংশীবদন-ঘোষের ললাটে রাজটীকা পড়িল। ধূর্ত্ত বংশীবদনও এই সুবিধা ছাড়িবার পাত্র নয়। প্রভু-পত্নীর দেহ-সাম্রাজ্যের অধিপতি হইয়া সে তাহার অস্থাবর সম্পত্তিরও মালিক হইবে না—এমন কথা ভাবিতে পারিল না। সম্পত্তির মালিক হইতে তাহাকে মোটেই বেগ পাইতে হইল না; খানসামা হইতে সদর নায়েব পদে উন্নতি দেখিতে দেখিতে হইল।
এদিকে করুণাময়ীর তখন প্রত্যহই ঘুসঘুসে জ্বর হইতেছিল—সেই জ্বর অজ্ঞাত কারণে কিংবা হয়তো বা অত্যন্ত জ্ঞাত কারণেই হঠাৎ বাড়িয়া ভীষণ মূর্ত্তি ধারণ করিল এবং লুব্ধ বিধবার মনের আগুন নিবিবার বহু পূর্ব্বেই অকস্মাৎ তাহাকে তাহার সংসার ও সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী হইতে অপসারিত করিল। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তাহার স্বামীর দূরসম্পর্কের লোলুপ আত্মীয়েরা একে একে সম্পত্তির লোভে আসিয়া হতাশ হইয়া দেখিল, সামান্য দুই-একটি দরিদ্র গ্রাম ছাড়া আর কিছুই নাই। তাহারা শুনিল, অস্থাবর সম্পত্তি অতি সামান্যই ছিল এবং যাহা ছিল তাহাও বিধবার স্বামীর দাস-দাসীদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
বংশীবদন বিপুল সম্পত্তি লইয়া রাধাগঞ্জে তাহার দরিদ্র পৈতৃক ভিটাতে উপস্থিত হইল। অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলিয়া সে যে প্রভূত ধনের মালিক হইয়া আসিয়াছে তাহার পরিচয় মাত্র প্রকাশ করিল না, সাধারণ রকম আরামে থাকিতে গেলে যেটুকু করা দরকার, তাহার অধিক খরচ