বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
রাজমোহনের স্ত্রী

যে তাহাকে ভালবাসে। ছলচাতুরীহীন সরল কনক; শুধু তাহাকেই সে তাহার মনের গোপন স্মৃতির কথা নিবেদন করিয়াছে। এইটুকু ছাড়া মাতঙ্গিনীর জীবনের ইতিহাস, নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগের ইতিহাস মাত্র। মাতঙ্গিনী এই কথা ভাবিতে ভাবিতেই কাঁদিতেছিল যে, এই নিদারুণ যন্ত্রণা হইতে তাহার অব্যাহতি নাই।

 গ্রীষ্মের গুমট গরম ক্রমশঃ অসহ্য বোধ হইতে লাগিল, মাতঙ্গিনী শয্যা ছাড়িয়া জানালাটা খুলিয়া দিবার জন্য উঠিল। কিন্তু জানালা খোলা হইল না—অতি মৃদু ও সতর্ক পদক্ষেপ-শব্দ সহসা তাহার কর্ণগোচর হইল। ঘরের বাহিরের শব্দ হইলেও দূরের নহে, যে জানালার ধারে সে দাঁড়াইয়াছিল, ঠিক যেন তাহার পশ্চাতেই শব্দ হইতেছিল। মেটে ঘরের জানালা যেমন সাধারণত হয় এই জানালাটি সেই ধরনেরই ছিল—খুব ছোট, দৈর্ঘ্যে প্রস্থে তিন আর দুই ফুটের বেশি হইবে না, এবং ঘরের মেঝে হইতে ইহার উচ্চতাও দুই ফুটের অধিক নহে।

 মাতঙ্গিনী থামিল, থামিয়া জানালার ফাটল দিয়া বাহিরে দেখিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু অনতিদূরে একসারি গাছ এবং দূরে চন্দ্রালোকিত আকাশের পটভূমিতে অপর কতকগুলি গাছের আন্দোলিত শীর্ষদেশ ছাড়া কিছুই দেখিতে পাইল না।

 পদশব্দ যেখান হইতে আসিতেছিল, সেখানে বা তাহার কাছাকাছিও কোনও পায়ে-চলার পথ ছিল না; মাতঙ্গিনী ভীত হইল, পাষাণপুত্তলিকার মত দাঁড়াইয়া উৎকর্ণ হইয়া আবার সেই শব্দ শুনিতে চেষ্টা করিল। পদধ্বনি তাহার অত্যন্ত নিকট পর্য্যন্ত আসিয়া থামিয়া গেল। মাতঙ্গিনী শুনিতে পাইল, কাহারা অতি মৃদুস্বরে যেন কানে কানে কথা কহিতেছে; কথোপকথন-নিরতদের মধ্যে একজনের কণ্ঠ তাহার স্বামীর কণ্ঠ বলিয়া চিনিতে পারাতে মাতঙ্গিনীর কৌতূহল ভয়ানক বাড়িয়া গেল; ওই কণ্ঠ অপেক্ষাকৃত উচ্চস্বরে কথা বলিতেছিল। মাতঙ্গিনী ও ইহাদের মধ্যে