সপ্তম পরিচ্ছেদ
লেখক এই অধ্যায়ে কয়েকটি অপদেবতার অবতারণা করিবার সুবিধা পাইয়াও হারাইয়াছেন এবং তাঁহার তরুণ পাঠক-পাঠিকাদিগকে বঞ্চিত করিবার জন্য অনুতপ্ত হইতেছেন।
অলক্ষ্যে থাকিয়া যে ভয়াবহ কথোপকথন মাতঙ্গিনী শুনিল, তাহার প্রত্যেকটি কথা তাহার কানে প্রবেশ করিয়া আতঙ্কে তাহার বুকের রক্ত হিম করিয়া দিতে লাগিল। তবু কথাবার্ত্তা যতক্ষণ চলিল, সে তাহার কম্পিত দেহলতাকে ভাঙিয়া পড়িতে দিল না, ভয়াবহ কৌতূহলের বশবর্তী হইয়া পূর্ব্বাপর সমস্তটা দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া শুনিল, কিন্তু কথা সমাপ্ত হইবার সঙ্গে সঙ্গে সে মৃতবৎ মেঝেতে লুটাইয়া পড়িল। কিয়ৎকাল ভয় ও যন্ত্রণার আতিশয্যে মুহ্যমান হইয়া মূর্চ্ছিতের মত সে পড়িয়া রহিল। ধীরে ধীরে তাহার চিন্তাশক্তি ফিরিয়া আসিতেই সে যাহা শুনিয়াছে, তাহার যথার্থ অর্থ হৃদয়ঙ্গম করিবার চেষ্টা করিল। তাহার স্বামীর চরিত্র ও জীবনের নূতন ও ভীষণ একটা দিক অকস্মাৎ আলোক-সম্পাতে তাহার নিকট স্পষ্ট হইয়া উঠিল। সে এতদিন পশুপ্রবৃত্তিসম্পন্ন স্বামীর কঠোর হৃদয় ও পশুর মত মেজাজের পরিচয়ই পাইয়াছিল, আজ দস্যুদলের সহকারী, সম্ভবত নিজে দস্যু, স্বামীর নূতন মূর্ত্তি দেখিয়া কদর্য্য গ্লানিতে তাহার দেহ ও মন কুঞ্চিত হইয়া উঠিল; তাহার স্মৃতি এই ভাবিয়াই পীড়িত হইতে লাগিল যে, এই ব্যক্তিই এতকাল তাহার নিষ্কলঙ্ক বক্ষে বিহার করিয়াছে। ভবিষ্যতের কথাও তাহার মনে হইল—এখন হইতে জানিয়া শুনিয়াই এই ব্যক্তির বীভৎস আলিঙ্গনে তাহাকে ধরা দিতে হইবে, নিজেকে দূরে রাখিবার উপায় নাই। সে সম্পূর্ণ শক্তিহীন।