—হতভাগী গেল কোথায়? ভেবেছে ফাঁকি দিয়ে পালাবে, সেটি হচ্ছে না বাবা, খুঁজে বের করবই তোকে।
রাজমোহনের কণ্ঠস্বর ততক্ষণে স্বাভাবিক হইয়াছে, সে বলিল, থাম, আমি ছাড়া আর কেউ আমার স্ত্রীর অঙ্গস্পর্শ করতে পারবে না। আমার বাঁধন খুলে দাও।
সর্দ্দার ঘরের চারিদিকে দাপাদাপি করিয়া ফিরিতেছিল। সে ভিখুর দিকে মুখ ফিরাইয়া বলিল, ভিখু, দড়িটা খুলে দে, আমি চুলের মুঠি ধরে ওকে বের করছি। ভিখু তরবারির আঘাতে রাজমোহনের হাতের বাঁধন কাটিয়া দিল। সর্দ্দার আর একটা কাপড়ের গাদায় হাত দিয়া বলিয়া উঠিল, হেৎ, খালি কাপড়ই দেখছি; দাড়া মাগী, পালাবি কোথায়?— ঘর্ম্মাক্তকলেবরে বিছানার পাশে আসিয়া সর্দ্দার তাহার উপর যথেচ্ছ হাতিয়ার চালাইতে লাগিল কিন্তু মাতঙ্গিনী কোথায়?
সর্দ্দার হাকিল, ভিখু, বাতিটা নিয়ে আয়, তক্তপোশের তলায় লুকুল কি না দেখি। —ভিখু আলোটা বেশ করিয়া উস্কাইয়া লইয়া আসিল, রাজমোহনও পিছনে পিছনে আসিল; হামাগুঁড়ি দিয়া তিনজনেই দেখিল, কেহই সেখানে নাই।
বাতিটা উঁচু করিয়া ধরিয়া তাহারা ঘরের আনাচে কানাচে সর্ব্বত্র খোঁজ করিল কিন্তু মাতঙ্গিনীকে দেখিতে পাইল না। রাজমোহন দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া চীৎকার করিয়া বলিল, দরজার দিকে চেয়ে দেখ, খোলা না? আমি ঘরে ঢুকে হুড়কো বন্ধ করেছিলাম। হতভাগা পালিয়েছে।
মাতঙ্গিনী সত্যই পলাইয়াছিল। সর্দ্দার ও তাহার স্বামী যখন পরস্পরের প্রাণ লইয়া ঘোর যুদ্ধে মত্ত ছিল তখন তাহার কথা তাহদের স্মরণ ছিল না। এই দুই বর্ব্বর অপেক্ষা হৃদয় যাহাদের অল্প কঠোর তাহারা মাতঙ্গিনীকে একবার দেখিলে তাহার কথা ভুলিতে পারিত না।