পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
রাজসিংহ।

 দস্যু বলিল, “মহারাণা রাজসিংহকে কে না চিনে?”

 তখন রাজসিংহ বলিলেন, “আমি তোমার জীবনদান করিলাম। কিন্তু তুমি ব্রাহ্মণের ব্রহ্মত্ব হরণ করিয়াছ, আমি যদি তোমাকে কোন প্রকার দণ্ড না দিই, তবে আমি রাজধর্ম্মে পতিত হইব।”

 মাণিকলাল বিনীতভাবে বলিল, “মহারাজাধিরাজ! এ পাপে আমি নুতন ব্রতী। অনুগ্রহ করিয়া আমার প্রতি লঘু দণ্ডেরই বিধান করুন। আমি আপনার সম্মুখেই শাস্তি লইতেছি।”

 এই বলিয়া দস্যু কটিদেশ হইতে ক্ষুদ্র ছুরিকা নির্গত করিয়া, অবলীলাক্রমে, আপনার তর্জ্জনী অঙ্গুলি ছেদন করিতে উদ্যত হইল। ছুরিতে মাংস কাটিয়া, অস্থি কাটিল না। তখন মাণিকলাল এক শিলাখণ্ডের উপর হস্ত রাখিয়া ঐ অঙ্গুলির উপর ছুরিকা বসাইয়া, আর একখণ্ড প্রস্তরের দ্বারা তাহাতে ঘা মারিল। আঙ্গুল কাটিয়া মাটীতে পড়িল। দস্যু বলিল, “মহারাজ! এই দণ্ড মঞ্জুর করুন।”

 রাজসিংহ দেখিয়া বিস্মিত হইলেন, দস্যু ভ্রূক্ষেপও করিতেছে না। বলিলেন,

 “ইহাই যথেষ্ট। তোমার নাম কি?”

 দস্যু বলিল, “এ অধমের নাম মানিকলাল সিংহ। আমি রাজপুতকুলের কলঙ্ক।”

 রাজসিংহ বলিলেন, “মাণিকলাল, আজি হইতে তুমি আমার কার্য্যে নিযুক্ত হইলে। এক্ষণে তুমি অশ্বারোহী সৈন্য ভুক্ত হইলে— তোমার কন্যা লইয়া উদয়পুরে যাও; তোমাকে ভূমি দিব বাস করিও।”