পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।
৫৭

 মাণিকলাল বিকৃতস্বরে বলিল, “আমি।”

 তখন চতুরা রমণী অতি ভীতকণ্ঠে খাঁ সাহেবকে বলিল, “সর্ব্বনাশ হইয়াছে— আমার স্বামী আসিয়াছেন—মনে করিরাছিলাম—তিনি আজ আর আসিবেন না। তুমি এই তক্তপোষের নীচে একবার লুকাও। আমি উহাকে বিদায় করিয়া দিতেছি।”

 মোগল বলিল, “সে কি? মরদ হইয়া ভয়ে লুকাইব? যে হয় আসুক না; এখনই কোতল করিব।”

 পানওয়ালী জিব কাটিয়া বলিল, ‘সে কি? সর্ব্বনাশ! আমার স্বামীকে মারিয়া ফেলিয়া আমার অন্নবস্ত্রের পথ বন্ধ করিবে? এই কি তোমাকে ভালবাসার ফল? শীঘ্র তক্তপোষের নীচে যাও। আমি এখনই উহাকে বিদায় করিয়া দিতেছি।”

 এদিকে মাণিকলাল পুনঃ পুনঃ দ্বারে করাঘাত করিতেছিল। অগত্যা খাঁ সাহেব তক্তপোষের নীচে গেলেন। মোটা শরীর বড় সহজে প্রবেশ করে না, ছাল চামড়া দুই এক জায়গায় ছিঁড়িয়া গেল—কি করে—প্রেমের জন্য অনেক সহিতে হয়। সে স্থূল মাংসপিণ্ড তক্তপোষতলে বিন্যস্ত হইলে পর পানওয়ালী আসিয়া দ্বার খুলিয়া দিল।

 ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলে পানওয়ালী পূর্ব্বশিক্ষামত বলিল, “তুমি আবার এলে যে? আজ আর আসিবে না বলিয়াছিলে যে?”

 মাণিকলাল পূর্ব্বমত বিকৃতস্বরে বলিল, “চাবিটা ফেলিয়া গিয়াছি।”