পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষোড়শ পরিচ্ছেদ।
৭৩

যে প্রাণভয়ে ভীত হইয়া তোমাকে ছাড়িয়া দিলাম। আগে যুদ্ধ শেষ হউক—তার পর তুমি যাইও। যওয়ান্ সব—আগে চল।”

 তখন চঞ্চলকুমারী মৃদু হাসিয়া মর্ম্মভেদী মৃদু কটাক্ষ করিয়া, দক্ষিণহস্তের কনিষ্ঠাঙ্গুলিস্থিত হীরকাঙ্গুরীয় বামহস্তের অঙ্গুলিদ্বয়ের দ্বারা ফিরাইয়া রাজসিংহকে দেখাইতে দেখাইতে বলিলেন, “মহারাজ! এই আঙ্গটিতে বিষ আছে। দিল্লীতে না যাইতে দিলে, আমি বিষ খাইব।”

 রাজসিংহ তখন হাসিলেন—বলিলেন, “বুঝিয়াছি রাজকুমারী—রমণীকুলে তুমি ধন্যা! কিন্তু তুমি যাহা ভাবিছে তাহা হইবে না। আজ রাজপুতের বাঁচা হইবে না; আজি রাজপুতকে মরিতেই হইবে—নহিলে রাজপুতনামে বড় কলঙ্ক হইবে। আমরা যতক্ষণ না মরি—ততক্ষণ তুমি বন্দী। আমরা মরিলে তুমি যেখানে ইচ্ছা সেইখানে যাইও।"

 চঞ্চলকুমারী হাসিল— অতিশর প্রণয় প্রফুল্ল ভক্তিপ্রমোদিত, সাক্ষাৎ মহাদেবের অনিবার্য্য এক কটাক্ষবাণ রাজসিংহের উপর ত্যাগ করিল। মনে মনে বলিতে লাগিল, “বীরচূড়ামণি! আজি হইতে আমি তোমার মহিষী হইলাম! যদি তোমার মহিষী না হই—তবে চঞ্চল কখনই প্রাণ রাখিবে না।” প্রকাশ্যে বলিল, “মহারাজ! দিল্লীশ্বর যাহাকে মহিষী করিতে অভিলাষ করিয়াছেন, সে কাহারও বন্দী নহে। এই আমি মোগল সৈন্যসম্মুখে চলিলাম—কাহার সাধ্য রাখে দেখি?”

 এই বলিয়া চঞ্চলকুমারী—জীবন্ত দেবীমূর্তি, রাজসিংহকে পাশ করিয়া রন্ধ্রমুখে চলিল। তাঁহাকে স্পর্শ করে কাহার