পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
রাজসিংহ।

“শত্রুদল পলায়ন করিয়াছে—আর কেন বৃথা পরিশ্রম করিতেছে? কার্য্য সিদ্ধ হইয়াছে, রূপনগরে ফিরিয়া যাও।” সৈনিকেরাও দেখিল—তাও বটে, সম্মুখশত্রু আর কেহ নাই। তখন তাহারা মহারাজা রাজসিংহের জয়ধ্বনি তুলিয়া রণজয়গর্ব্বে গৃহাভিমুখে ফিরিল। দণ্ডকাল মধ্যে পার্ব্বত্য পথ জনশূন্য হইল—কেবল হত ও আহত মনুষ্য ও অশ্ব সকল পড়িয়া রহিল। দেখিয়া উচ্চ পর্ব্বতের উপরে, প্রস্তরসঞ্চালনে যে সকল রাজপুত নিযুক্ত ছিল, তাহারা নামিল। এবং কোথাও কাহাকেও না দেখিয়া রাণা অবশিষ্ট সৈন্য সহিত অবশ্য উদয়পুর যাত্রা করিয়াছেন বিবেচনা করিয়া তাহারাও তাঁহার সন্ধানে সেই পথে চলিল। পথিমধ্যে রাজসিংহের সহিত সাক্ষাৎ হইল। সকলে একত্রে উদয়পুরে চলিলেন।

 সকলে জুটিল—কেবল মাণিকলাল নহে। মাণিকলাল, নির্ম্মলকে লইয়া বিব্রত। সকলকে গুছাইয়া পাঠাইয়া দিয়া, নির্ম্মলের কাছে আসিয়া জুটিল। তাহাকে কিছু ভোজন করাইয়া, গ্রাম হইতে বাহক ও দোলা লইয়া আসিল। দোলায় নির্ম্মলকে তুলিয়া, যে পথে রাণা গিয়াছেন সে পথে না গিয়া ভিন্ন পথে চলিল—বমাল সমেত ধরা পড়ে, এমত ইচ্ছা রাখে নাই।

 মাণিকলাল নির্ম্মলকে লইয়া পিসীর বাড়ী উপস্থিত হইল। পিসীমাকে ডাকিয়া বলিল, “পিসী মা, একটা বউ এনেছি।” বধূ দেখিয়া পিসীমা কিছু বিষণ্ণ হইলেন—মনে করিলেন— লাভের যে আশা করিয়াছিলাম—বধূ বুঝি তাহার ব্যাঘাত করিবে। কি করে, দুইটা আশরাফি নগদ লইয়াছে—একদিন