পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজভক্তি । >臀 পরামর্শ উত্তম হইয়াছে। কারণ, সাধারণত রাজবংশীয়ের প্রতি ভারতবর্ষীয় হৃদয়ের অভিমুখিত বহুকালের প্রকৃতিগত। সেই জন্ত দিল্লীর দরবারে ডুক অফ কনটু থাকিতে কর্জনের দরবার-তক্তগ্রহণ ভারতবর্ষীয়মাত্রকেই বাজিয়াছিল ; এরূপ স্থলে ডুকের উপস্থিত থাকাই উচিত ছিল না । বস্তুত প্রজাগণের ধারণা হইয়াছিল যে কার্জন নিজের দম্ভপ্রচার করিবার জন্তই ইচ্ছাপূৰ্ব্বক দরবারে ডুক অফ কনটের উপস্থিতি ঘটাইয়াছিলেন। আমরা বিলাতি কায়দা বুঝিনা, বিশেষত দরবার ব্যাপারটাই যখন বিশেষভাবে প্রাচ্য, তখন এ উপলক্ষ্যে রাজবংশের প্রকাগু অবমাননা অন্তত পলিসিসঙ্গত হয় নাই । যাই হোকৃ ভারতবর্ষের রাজভক্তিকে নাড়া দিবার জন্য একবার রাজপুত্রকে সমস্ত দেশের উপর দিয়া বুলাইয়া লওয়া উচিত ; বোধকরি এইরূপ পরামর্শ হইয়া থাকিবে। কিন্তু ভারতবর্ষের ইংরেজ, হৃদয়ের কারবার কোনোদিন করে নাই । তাহারা এদেশকে হৃদয় দেয়ও নাই এদেশের হৃদয় চায়ও নাই, দেশের হৃদয়টা কোথায় আছে তাহার খবরও রাখে না। ইহার রাজপুত্রের ভারতবর্ষে আগমনব্যাপারটাকে যত স্বল্পফলপ্রদ করা সম্ভব তাত করিল। আজ রাজপুত্র ভারতবর্ষের মাটি ছাড়িয়া জাহাজে উঠতেছেন আর আমাদের মনে হইতেছে যেন একটা স্বপ্ন ভাঙিয়া গেল, যেন একটা রূপকথা শেষ হইল। কিছুই হইল না— মনে রাখিলার কিছু রহিল না, যাহা যেমন ছিল তাহ তেমনি রহিয়া গেল। ভারতবর্ষের রাজভক্তি প্রকৃতিগত একথা সত্য। হিন্দু ভারতবর্ষের রাজভক্তির একটু বিশেষত্ব আছে। হিন্দুরা রাজাকে দেবতুল্য ও রাজভক্তিকে ধৰ্ম্মস্বরূপে গণ্য করিয়া থাকেন। পাশ্চাত্যগণ একথার যথার্থ মৰ্ম্ম গ্রহণ করিতে পারেন না । তাহারা মনে করেন ক্ষমতার কাছে এইরূপ অবনত হওয়া আমাদের স্বাভাবিক দীন চরিত্রের পরিচয় । সংসারের অধিকাংশ সম্বন্ধকেই হিন্দু, দৈবসম্বন্ধ না মনে করিয়া