পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Job," রাজা প্রজ । থাকিতে পারে না। হিন্দুর কাছে প্রায় কিছুই আকস্মিক সম্বন্ধ নহে। কারণ, হিন্দু জানে, আমাদের কাছে প্রকাশ যতই বিচিত্র ও বিভিন্ন হউক ন মূলশক্তি একই। ভারতবর্ষে ইহ কেবলমাত্র একটা দার্শনিক তত্ত্ব নহে, ইহা ধৰ্ম্ম,—ইহা পুথিতে লিখিবার কলেজে পড়াইবার নহে—ইহা জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ে উপলব্ধি ও জীবনের প্রাত্যহিক ব্যবহারে প্রতিফলিত করিবার। আমরা পিতামাতাকে দেবতা বলি, স্বামীকে দেবতা বলি, সতী স্ত্রীকে লক্ষ্মী বলি। গুরুজনকে পুজা করিয়া আমরা ধৰ্ম্মকে তৃপ্ত করি। ইহার কারণ, যে কোনো সম্বন্ধের মধ্য হইতে আমরা মঙ্গললাভ করি, সেষ্ট সম্বন্ধের মধ্যেই আমরা আদি মঙ্গলশক্তিকে স্বীকার করিতে চাই । সেই সকল উপলক্ষ্য হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া মঙ্গলময়কে স্বদুর স্বাগ স্থাপনপূর্বক পূজা করা ভারতবর্ষের ধৰ্ম্ম নহে। পিতামাতাকে যখন আমরা দেবতা বলি, তখন এ মিথ্যাকে আমরা মনে স্থান দিই না যে, তাহারা বিশ্বভুবনের ঈশ্বর বা তাহানের অলৌকিক শক্তি আছে। তাহদের মনুষ্যত্ব সমস্তই ক্ষমিবা নিশ্চিত জানি, কিন্তু ইহাও সেইরূপ নিশ্চিত জানি যে, ইহঁর পিতামাতারূপে আমাদের যে কল্যাণ সাধন করিতেছেন, সেক্ট পিতৃমাতৃত্ব জগতের পিতামাতারই প্রকাশ । ইন্দ্র চন্দ্র অগ্নি বায়ুকে দে বেদে দেবতা বলিয়া স্বীকাব করা হইয়াছে তাহারও এই কারণ। শক্তিপ্রকাশের মধ্যে ভারতবর্ষ শক্তিমান পুরুষের সন্ত অনুভব না করিয়া কোনো দিন তৃপ্ত হয় নাই। এই জন্য বিশ্বভুবনে নানা উপলক্ষ্যে নান আকারেই ভক্তিবিনম্র ভারতবর্ষের পূজা সমাহৃত হইয়াছে। জগৎ আমাদের নিকট সৰ্ব্বদাই দেব-শক্তিতে সজীব। একথা সম্পূর্ণ মিথ্য যে আমরা দীনতাবশতই প্রবলতার পূজা করিয়া থাকি। সকলেই জানে গাভীকেও ভারতবর্ষ পূজা করিয়াছেন। গাভী যে পশু তাহা সে জানে না—ইহা নহে ৷ মানুষ প্রবল এবং গাভীই দুৰ্ব্বল । কিন্তু ভারতবর্ষীয় সমাজ গাভীর নিকট হইতে নানাপ্রকার মঙ্গললাভ করে ।