পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

) » R রাজা প্রজা । সমস্ত বড় বড় নামধারী মিথ্যাকে তোমার সৰ্ব্বাস্ত:করণের দ্বারা অস্বীকার কর, ইহারা যেন বিভীষিকার মুখস পরিয়া তোমার অন্তরাত্মাকে লেশমাত্র সঙ্কুচিত করিতে না পারে। তোমার আত্মার দিব্যতা, উজ্জ্বলতা, পরমশক্তিমত্তার কাছে এই সমস্ত তর্জন গর্জন, এই সমস্ত উচ্চ পদের অভিমান, এই সমস্ত শাসন শোষণের আয়োজন আড়ম্বর, তুচ্ছ ছেলেখেলামাত্র-ইহার যদিবা তোমাকে পীড়া দেয় তোমাকে যেন ক্ষুদ্র করিতে না পারে। যেখানে প্রেমের সম্বন্ধ সেইখানেই নত হওয়ায় গৌরব—যেখানে সে সম্বন্ধ নাই সেখানে যাহাঁই ঘটুক, অন্তঃকরণকে মুক্ত রাখিয়ে, ঋজু রাখিয়ো, দীনতা স্বীকার করিয়ে না, ভিক্ষাবৃত্তি পরিত্যাগ করিয়ো, নিজের প্রতি অক্ষুঃ আস্থা রাখিয়ে । কারণ, নিশ্চয়ই জগতে তোমার একান্ত প্রয়োজন আছে—সেই জন্ত বহু দুঃখেও তুমি বিনাশপ্রাপ্ত হও নাই। অন্তের বাহ অনুকরণের চেষ্টা করিয়া তুমি যে এতকাল পরে একটা ঐতিহাসিক প্রহসন রচনা করিবার জন্য এতদিন বাচিয়া আছ, তাহা কখনই নহে। তুমি যাহা হইবে যাহা করিবে অন্ত দেশের ইতিহাসে তাহার নমুনা নাই—তোমার যথাস্থানে তুমি বিশ্বভুবনের সকলের চেয়ে মহৎ । হে আমার স্বদেশ, মহাপর্বতমালার পাদমূলে মহাসমুদ্র-পরিবেষ্টিত তোমার আসন বিস্তীর্ণ রহিয়াছে—এই আসনের সম্মুখে হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান বৌদ্ধ বিধাতার আহবানে আকৃষ্ট হইয়া বহুদিন হইতে প্রতীক্ষা করিতেছে, তোমার এই আসন তুমি যখন পুনৰ্ব্বার একদিন গ্রহণ করিবে, তখন আমি নিশ্চয় জানি—তোমার মন্ত্রে কি জ্ঞানের, কি কৰ্ম্মের, কি ধৰ্ম্মের অনেক বিরোধ মীমাংসা হইয়া যাইবে এবং তোমার চরণপ্রান্তে আধুনিক নিষ্ঠুর পোলিটিক্যাল কালভুজঙ্গের বিশ্বদ্বেষী বিষাক্ত দৰ্প পরিশান্ত হইবে। তুমি চঞ্চল হইয়ে না, লুব্ধ হইয়ে না, ভীত হইয়ে ন, তুমি “আত্মানং বিদ্ধি” আপনাকে জান এবং “উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধত, ক্ষুরস্ত ধারা মিশিত দুরত্যয় দুর্গং পথপ্তং কবয়ে বদস্তি”