পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ծՀ8 রাজা প্রজা । নিষ্ফল করিবারজন্ত উঠিয়া পড়িয়া প্রবৃত্ত হয়। ফলকে পাকিতে দেওয়াকেই সে ঔদাসীন্ত বলিয়া জ্ঞান করে, টান দিয়া ফলকে ছিড়িয়া লওয়াকেই সে একমাত্র পৌরুষ বলিয়া জানে ; সে মনে করে যে মালী প্রতিদিন গাছের তলায় জল সেচন করিতেছে গাছের ডালে উঠিবার সাহস নাই বলিয়াই তাহার এই দীনতা। এ অবস্থায় মালীর উপর তাহা রাগ হয়, জল দেওয়াকে সে ছোট কাজ মনে করে । উত্তেজিত অবস্থায় মানুষ উত্তেজনাকেই জগতের মধ্যে সকলের চেয়ে বড় সত্য বলিয়া জানে, যেখানে তাহার অভাব দেখে সেখানে সে কোন সর্থিকতাই দেখিতে পায় না । কিন্তু ফুলিঙ্গের সঙ্গে শিখার যে প্রভেদ উত্তেজনার সঙ্গে শক্তির সেই প্রভেদ। চকমকি কিয় যে ফুলিঙ্গ বাহির হইতে থাকে তাহাতে ঘরের অন্ধকার দূর হয় না। তাহার আয়োজন স্বল্প তেমনি তাহার প্রয়োজনও সামান্ত। প্রদীপের আয়োজন অনেক, তাহার আধার গড়িতে হয়, শলিতা পাকাইতে হয়, তাহার তেল জোগাইতে হয়। যখন যথাযথ মূল্য দিয়া সমস্ত কেনা হইয়াছে এবং পরিশ্রম করিয়া সমস্ত প্রস্তুত হইয়াছে, তখনই প্রয়োজন হইলে ফুলিঙ্গ আপনাকে স্থায়ী শিখায় পরিণত করিয়া ঘরকে আলোকিত করিয়া তুলিতে পারে। যখন উপযুক্ত চেষ্টার দ্বারা সেই প্রদীপরচনার আয়ো জন করিবার উদ্যম জাগিতেছে না, যখন শুদ্ধমাত্র ঘন ঘন চকমকি ঠোকার চাঞ্চল্যমাত্রেই সকলে আনন্দে অভিভূত হইয়া উঠিতেছি তখন সত্যের অনুরোধে স্বীকার করিতেই হইবে এমন করিয়া কখনই ঘরে আলো জ্বলিবে না কিন্তু ঘরে আগুন লাগা অসম্ভব নহে। কিন্তু শক্তিকে স্থলভকরিয়া তুলিবার চেষ্টায় মানুষ উত্তেজনার আশ্রয় অবলম্বন করে। একথা ভুলিয়া যায় যে এই অস্বাভাবিক স্থলভতা একদিকে মূল্য কমাইয়া আর একদিক দিয়া এমন করিয়া কষির মূল্য আদায় করিয়া লয়, যে গোড়াতেই তাহার হশ্বল্যতা স্বীকার করিয়া লইলে তাহাকে অপেক্ষাকৃত শস্তায় পাওয়া বাইতে পারে।