পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথ ও পাথেয় । >&@ আমাদের দেশেও যখন দেশের হিতসাধনবুদ্ধি নামক স্থলভ মহামূল্য পদার্থ একটি আকস্মিক উত্তেজনায় আবালবৃদ্ধবনিতার মধ্যে অভাবনীয় প্রচুররূপে দেখা দিল তখন আমাদের মত দরিদ্র জাতিকে পরমানন্দে উৎফুল্ল করিয়া তুলিল। তখন এ কথা আমাদের মনে করিতেও প্রবৃত্তি হয় নাই যে, ভাল জিনিষের এত সুলভত স্বাভাবিক নহে। এই ব্যাপক পদার্থকে কাজের শাসনের মধ্যে বাধিয়া সংযত সংহত করিতে না পারিলে ইহার প্রকৃত সার্থকতাই থাকে না। রাস্তাঘাটের লোক যুদ্ধ করিব বলিয়া মাতিয়া উঠিলেই তাহাদিগকে সৈন্তজ্ঞান করিয়া যদি সুলভে কাজ সারিবার আশ্বাসে উল্লাস করিতে থাকি তবে সত্যকার লড়াইয়ের বেলায় সমস্ত ধন প্রাণ দিয়াও এই হঠাৎ-শস্তার সাংঘাতিক দায় হইতে নিস্কৃতি পাওয়া ुम्नि मl । আসল কথা, মাতাল যেমন নিজের এবং মণ্ডলীর মধ্যে নেশাকে কেবলি বাড়াইয়া চলিতেই চায় তেমনি উত্তেজনার মাদকতা আমরা সম্প্রতি যখন অনুভব করিলাম তখন কেবলি সেটাকে বাড়াইয়া তুলিবার জন্ত আমাদের প্রবৃত্তি অসংযত হইয়া উঠিল। অথচ এটা যে একটা নেশার তাড়না সে কথা স্বীকার না করিয়া আমরা বলিতে লাগিলাম, গোড়ায় ভাবের উত্তেজনারই দরকার বেশি ; সেটা রীতিমত পাকিয়া উঠিলে আপনিই তাহা কাজের দিকে ধাবিত হয়—অতএব দিনরাত যাহার কাজ কাজ করিয়া বিরক্ত করিতেছে তাহার ছোট নজরের লোক—তাহারা ভাবুক নহে—আমরা কেবলি ভাবে দেশ মাতাইব । সমস্ত দেশ জুড়িয়া আমরা ভাবের ভৈরবীচক্র বসাইয়া দিলাম ; মন্ত্র এই হইল— পীত্ব পীত্ব পুনঃ পীত্ব পুনঃ পঙতি ভূতলে উখায় চ পুনঃ পীত্ব পুনর্জন্মে ন বিদ্যন্তে । চেষ্টা নহে, কৰ্ম্ম নহে, কিছুই গড়িয়া তোলা নহে, কেবল ভাবোচ্ছ সেই সাধন, মত্ততাই মুক্তি ।