পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুবিচারের অধিকার । (b) প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কেনই বা বৃথা আন্দোলন করা এবং আমরই বা এ প্রবন্ধ লিখিতে বসিবার প্রয়োজন কি ছিল ? গবর্মেন্টের নিকট সকরুণ অথবা সাভিমান স্বরে আবেদন বা অভিযোগ করিবার জন্য প্রবন্ধ লিখার কোন আবশুক নাই সে কথা আমি সহস্রবার স্বীকার করি। আমাদের এই প্রবন্ধ কেবল আমাদের স্বজাতীয়ের জন্য। আমরা নিজের ব্যতীত আমাদের নিজেদের প্রতি অন্তায় ও অবিচারের প্রতিকার কাহারও সাধ্যায়ত্ত নহে । ক্যামুটি সমুদ্রতরঙ্গকে যেখানে থামিতে বলিয়াছিলেন, সমুদ্রতরঙ্গ সেখানে থামে নাই—সে জড়শক্তির নিয়মানুবৰ্ত্তী হইয়া যথোপযুক্ত স্থানে গিয়া আঘাত করিয়াছিল। ক্যানু্যট মুখের কথায় বা মন্ত্রোচ্চারণে তাহাকে ফিরাইতে পারিতেন না বটে কিন্তু বাধ বাধিয়া তাহাকে প্রতিহত করিতে পারিতেন । স্বাভাবিক নিয়মানুগত আঘাতপরম্পরাকে যদি অৰ্দ্ধপথে বাধা দিতে হয় তবে আমাদিগকেও বাধ বাধিতে হইবে। সকলকে এক হইতে হইবে । সকলকে সমহূদয় হইয়া সমবেদন অনুভব করিতে হইবে । দল বাধিয়া যে বিপ্লব করিতে হইবে তাহা নহে—আমাদের সে শক্তিও নাই। কিন্তু দল বঁাধিলে যে একটা বৃহত্ত্ব এবং বল লাভ করা যায় তাহাকে লোকে শ্রদ্ধা না করিয়া থাকিতে পারে না। শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিতে না পারিলে সুবিচার আকর্ষণ করা বড় কঠিন । কিন্তু বালির বঁধি বধিবে কি করিয়া ? যাহারা বারম্বার নিহত পরাহত হইয়াছে অথচ কোন কালে সংহত হইতে শিখে নাই, যাহাঁদের সমাজেব মধ্যে অনৈক্যের সহস্ৰ ৰিষবীজ নিহিত রহিয়াছে তাহাদিগকে কিসে বঁাধিতে পারিৰে ? ইংরাজ যে আমাদের মৰ্ম্মবেদন অনুভব করিতে পারে না এবং ইংরাজ ঔষধের দ্বারা চিকিৎসার চেষ্টা না করিয়া কঠিন আঘাতের দ্বারা আমাদের হৃদয়ব্যথা চতুগুণ বৰ্দ্ধিত করিবার উদ্যোগ করিতেছে