পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজভক্তি । রাজপুত্র আসিলেন । রাজ্যের যত পাত্রের পুত্র তাহাকে গণ্ডি দিয় বিরিয়া বসিল—তাহার মধ্যে একটু ফাক পায় এমন সাধ্য কাহারে রহিল না । এই ক্ষাক যতদূর সম্ভব সঙ্কীর্ণ করিবার জন্য কোটালের পুত্র পাহার দিতে লাগিল—সে জন্ত সে শিরোপা পাইল । তাহার পর ? তাহার পর বিস্তর বাজি পুড়াইয়া রাজপুত্র জাহাজে চড়িয়া চলিয়া গেলেন—এব: আমার কথাটি ফুরালো, নটে শাকটি মুড়ালো । ব্যাপারখানা কি ? একটি কাহিনীমাত্র। রাজ্য ও রাজপুত্রের এই বহুদুলভ মিলন যত সুদূর, যত স্বল্প, যত নিরর্থক হওয়া সম্ভব তাহ: হইল । সমস্ত দেশ পর্য্যটন করিয়া দেশকে যত কম জানা—দেশের সঙ্গে যত কম যোগস্থাপন হইতে পারে, তাহা বহু ব্যয়ে—বহু নৈপুণ্য ও সমারোহসহকারে সমাধা হইল । অবগুই রাজপুরুষেরা ইহার মধ্যে কিছু একটা পলিসি, কিছু একট: প্রয়োজন বুঝিয়া ছিলেন—নহিলে এত বাজে খরচ করিবেন কেন ? রূপকথার রাজপুত্র কোনো সুপ্ত রাজকন্তাকে জাগাইবার জন্ত সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হইয়াছিলেন ; আমাদের রাজপুত্রও বোধকরি মুপ্ত রাজভক্তিকে জাগাইবার জন্তই যাত্রা করিয়া থাকিবেন, কিন্তু সোনার কাঠি কি মিলিয়াছিল ? নানা ঘটনায় স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, আমাদের রাজপুরুবেরা সোনার কাঠির চেয়ে লোহার কাঠির উপরেই বেশী আস্থা রাখিয়া থাকেন ! তাহাদের প্রতাপের আড়ম্বরটাকেই তাহারা বজ্রগর্ভ বিদ্যুতের মত ক্ষণে ক্ষণে আমাদের চোখের উপর দিয়া ঝলকিয়া লইয়া যান । তাহাতে আমাদের চোখ ধাধিয়া যায়, হংকম্পও হইতে পারে কিন্তু রাজা প্রজার মধ্যে অন্তরের বন্ধন দৃঢ় হয় না –পার্থক্য আরও বাড়িয়া যায়।