পাতা:রাজা রামমোহন - দেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰথম পরিচ্ছেদ ব্ৰজবিনোদ পুত্ৰগণকে ডাকিয়া একে একে সকলকেই ভট্টাচাৰ্য্যের কন্যাকে বিবাহ করিতে বলিলেন, কিন্তু কুলভঙ্গ এবং সামাজিক অপমান ও “একঘরে’ হইবার ভয়ে কেহই তাহাতে সম্মত হইল না । তিনি মহাফিাঁপরে পড়িয়া চতুর্দিক অন্ধকার দেখিলেন-সত্যভঙ্গ হইবার ভয়ে চক্ষু দুটি জলে ভরিয়া আসিল । রামকান্ত এতক্ষণ চুপ করিয়া সকল দেখিতেছিলেন এবং শুনিতেছিলেন । পিতার অবস্থা ভাবিয়া-ৰ্তাহার চক্ষে জল দেখিয়া পিতৃভক্ত-পুত্রের প্রাণে যেন শেল বিধিল-তাহার কাছে সমাজ, লোকলজ্জা প্ৰভৃতি আতি তুচ্ছ বোধ হইল, তিনি সকলের সম্মুখে দাড়াইয়া দৃঢ়স্বরে কহিলেন “আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন বাবা, আমি ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ের কন্যাকে বিবাহ করিব।” ব্ৰজবিনোদ যেন অকুলে কুল পাইলেন-প্ৰাণ খুলিয়া রামকান্তকে ঐকান্তিক শেষ আশীৰ্ব্বাদ করিলেন । যথাসময়ে রামকান্ত রায় শুঠাম ভট্টাচাৰ্য্যের কন্যা “তারিণী দেবী”কে বিবাহ করিয়া গৃহে আনিলেন। তারিণীদেবী সেকালের নিষ্ঠাবান ব্ৰাহ্মণের মেয়ে। ব্ৰাহ্মণের ঘরে যত রকমের পূজা-অৰ্চনা, ব্ৰত-নিয়ম, আচার-অনুষ্ঠান হওয়া উচিত, সে সকলই তার বাপের বাড়ীতে ষোল আনা রকম হইত। ছেলেবেলা হইতে সেই সব দেখিয়া-সেই রকমে চরিত্র গড়িয়া, তিনি পরম ভক্তিমতী, পবিত্ৰহৃদয়া ধাৰ্ম্মিক হইয়াছিলেন। সুতরাং রামকান্ত রায়ের সহিত তারিণী দেবীর মিলন-হার-পাৰ্বতীর মিলনের মত-রায়বংশের ভবিষ্যৎ গৌরববৃদ্ধির কারণ হইল। ইহাদের পুত্ৰ হইল, নাম রাখিলেন-“রামমোহন।’ ইনিই ভবিষ্যতে “রাজা রামমোহন রায়” নামে পরিচিত হইয়া দেশে অমর কীৰ্ত্তি রাখিয়া গিয়াছেন ।