পাতা:রাজা সীতারাম রায় - যদুনাথ ভট্টাচার্য (১৯০৭).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
রাজা সীতারাম রায়
১১১

 হরেকৃষ্ণপুরের কৃষ্ণসাগরও বেশ বড় পুষ্করিণী। এই পুষ্করিণী ৮৭৫ হাত দীর্ঘ ও ৩৫৫ হাত প্রস্থ। ইহার জল অদ্যাপি বহুসংখ্যক লােকে ব্যবহার করিয়া থাকে ও ইহার জলে স্নান করে। কৃষ্ণসাগরের জলকরেও বার্ষিক ৩৫০ টাকা হইতে ৩০০ শত টাকা আদায় হইয়া থাকে। সীতারামের আয়তক্ষেত্রাকার দুর্গের অন্য তিনদিকের গড়ের চিহ্নমাত্র আছে। দক্ষিণ দিকের গড় স্পষ্টরূপ বিদ্যমান রহিয়াছে। এই গড় কিঞ্চিদধিক ১ মাইল দীর্ঘ ও ২০০ শত হাত প্রস্থ। কথিত আছে, এই গড় স্বনামখ্যাতা রাণী ভবাণী কর্তৃক একবার সংস্কৃত হইয়াছিল। এই গড়েও অপৰ্যাপ্ত মৎস্য থাকে এবং ইহার জলকরও বৎসরভেদে ৪০০ টাকা হইতে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আদায় হইয়া থাকে।

 সীতারামের ৪র্থ লােকহিতকর কাৰ্য্য বিবিধ জাতীয় প্রকৃতিপুঞ্জের মধ্যে শান্তি ও একতাস্থাপন। তঁাহার সময়েই প্রতি গ্রামে নিরীহ ব্রাহ্মণ, কায়স্থ প্রভৃতি উচ্চশ্রেণীর হিন্দুগণ এবং চণ্ডাল, বিন্দী প্রভৃতি নিম্নশ্রেণীর হিন্দুগণ ও দুর্ধর্ষ পাঠানগণ একমত হইয়া বাস করিতে শিক্ষা করেন। সীতারাম তাহার পাঠান সেনাগণকে ভাই বলিতেন এবং তাঁহার প্রকৃতিপুঞ্জের মধ্যেও হিন্দু-মুসলমানে মিত্র ভাব স্থাপন করিয়া- ছিলেন। সেই সময়ে মুসলমান ফকিরগণ ভিক্ষাকালে নিম্নলিখিত কবিতা বলিয়া ভিক্ষা করিয়া বেড়াইত-

শুন সবে ভক্তি ভাবে করি নিবেদন।
দেশ গায়েতে যা হইল শুন দিয়া মন।
রাজাদেশে হিন্দু বলে মুসলমানে ভাই।
কাজে লড়াই কাটাকাটির নাহিক বালাই।