পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

నీ রজনী ধরিয়া লইয়া যাইত। আবার নিরাশ হইয়া ফিরিয়া আসিতাম, আবার প্রতিজ্ঞা করিতাম, যাইব না—আবার যাইতাম । এইরূপে দিন কাটিতে লাগিল। মনে মনে আলোচনা করিতাম, কেন যাই ? শুনিয়াছি, স্ত্রীজাতি পুরুষের রূপে মুগ্ধ হইয়া ভালবাসে। আমি কাণ, কাহার রূপ দেখিয়াছি ? তবে কেন যাই ? কথা শুনিব বলিয়া ? কখন কেহ শুনিয়াছে যে, কোন রমণী শুধু কথা শুনিয়া উন্মাদিনী হইয়াছে ? আমিই কি তাই হইয়াছি ? তাও কি সম্ভব ? যদি তাই হয়, তবে বাদ্য শুনিবার জন্ত, বাদকের বাড়ী যাই না কেন ? সেতার, সারেঙ্গ, এসরাজ, বেহালার অপেক্ষ কি শচীন্দ্র সুকণ্ঠ ? সে কথা মিথ্যা। -- তবে কি সেই স্পর্শ ! আমি যে কুসুমরাশি রাত্ৰি দিব লইয়া আছি, কখন পাতিয়া শুইতেছি, কখন বুকে চাপাইতেছি—ইহার অপেক্ষ তাহার স্পর্শ কোমল ? তা ত নয়। তবে কি ? এ কাণাকে কে বুঝাইবে, তবে কি ? তোমরা বুঝ না, বুঝাইবে কি ? তোমাদের চক্ষু আছে, রূপ চেন, রূপই বুঝ। আমি জানি, রূপ দ্রষ্টার মানসিক বিকার মাত্র—শব্দও মানসিক বিকার। রূপ রূপবানে নাই, রূপ দর্শকের মনে—নহিলে একজনকে সকলেই সমান রূপবান দেখে না কেন ? একজনে সকলেই আসক্ত হয় না কেন ? সেইরূপ শব্দও তোমার মনে। রূপ দর্শকের একটি মনের মুখ মাত্র, শব্দও শ্রোতার একটি মনের সুখ মাত্র, স্পর্শও স্পর্শকের মনের মুখ মাত্র। যদি আমার রূপসুখের পথ বন্ধ থাকে, তবে শব্দ স্পর্শ গন্ধ কেন 'রূপসুখের ন্যায় মনোমধ্যে সৰ্ব্বময় না হইবে ? 娜 শুষ্ক ভূমিতে বৃষ্টি পড়িলে কেন না সে উৎপাদিনী হইবে ? শুষ্ক কষ্ঠে অগ্নি সংলগ্ন হইলে কেন না সে জলিবে রূপে হোক, শব্দে হোক, স্পর্শে হোক, শূন্ত রমণীহৃদয়ে সুপুরুষসংস্পর্শ হইলে কেন প্রেম না জন্মিবে? দেখ, অন্ধকারেও ফুল ফুটে, মেঘে ঢাকিলেও চাদ গগনে বিহার করে, জনশূন্ত অরণ্যেও কোকিল ডাকে, যে সাগরগর্ভে মনুষ্য কখন যাইবে ন, সেখানেও রত্ন প্রভাসিত হয়, অন্ধের হৃদয়েও প্রেম জন্মে, আমার নয়ন নিরুদ্ধ বলিয়া হৃদয় কেন প্রফুটিত হইবে না ? হইবে না কেন, কিন্তু সে কেবল আমার যন্ত্রণার জন্ত । বোবার কবিত্ব, কেবল তাহার যন্ত্রণার জন্ত । বধিরের সঙ্গীতামুরাগ যদি হয়, কেবল তাহার যন্ত্রণার জন্য ; আপনার গীত আপনি শুনিতে পায় না। আমার হৃদয়ে প্রণয়সঞ্চার তেমনই যন্ত্রণার জন্য। পরের রূপ দেখিব কি—আমি আপনার কখন আপনি দেখিলাম না। রূপ। রূপ। আমার কি রূপ ।