পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় খণ্ড । অমরনাথের কথা প্রথম পরিচ্ছেদ আমার এই অসার জীবনের ক্ষুদ্র কাহিনী লিখিবার বিশেষ প্রয়োজন আছে। এ সংসারসাগরে, কোন চরে লাগিয়া আমার এই নৌকা ভাঙ্গিয়াছে, তাহ এই বিশ্বচিত্রে আমি আঁকিয়া রাখিব ; দেখিয়া নবীন নাবিকের সতর্ক হইতে পরিবে । আমার নিবাস—অথবা পিত্ৰালয় শাস্তিপুর—আমার বর্তমান বাসস্থানের কিছুমাত্র স্থিরতা নাই। আমি সংকায়স্থকুলোদ্ভূত, কিন্তু আমার পিতৃকুলে একটি গুরুতর কলঙ্ক ঘটিয়াছিল। আমার খুল্লতাতপত্নী কুলত্যাগিনী হইয়াছিলেন। আমার পিতার ভূসম্পত্তি যাহা ছিল—তদ্বারা অন্ত উপায় অবলম্বন না করিয়াও সংসারযাত্রা নিৰ্বাহ করা যায়। লোকে তাহাকে ধনী বলিয়া গণনা করিত। তিনি আমার শিক্ষার্থ অনেক ধনব্যয় করিয়াছিলেন। আমিও কিঞ্চিৎ লেখাপড়া শিখিয়াছিলাম—কিন্তু সে কথায় কাজ নাই । সপের মণি থাকে ; আমারও বিদ্যা ছিল। 驰 আমার বিবাহযোগ্য বয়স উপস্থিত হইলে আমার অনেক সম্বন্ধ আসিল—কিন্তু কোন সম্বন্ধই পিতার মনোমত হইল না। তাহার ইচ্ছ, কথা পরম সুন্দরী হইবে, কস্তার পিতা পরম ধনী হইবে, এবং কোলান্তের নিয়ম সকল বজায় থাকিবে। কিন্তু এরূপ কোন সম্বন্ধ উপস্থিত হইল না। আসল কথা, আমাদিগের কুলকলঙ্ক শুনিয়া কোন বড় লোক আমাকে কস্তাদান করিতে ইচ্ছুক হয়েন নাই। এইরূপ সম্বন্ধ করিতে করিতে আমার পিতার পরলোকপ্রাপ্তি হুইল । পরিশেষে পিতার স্বর্গারোহণের পর আমার এক পিসী এক সম্বন্ধ উপস্থিত করিলেন। গঙ্গাপার, কালিকাপুর নামে এক গ্রাম ছিল। এই ইতিহাসে ভবানীনগর নামে অন্য গ্রামের নাম উত্থাপিত হইবে ; এই কালিকাপুর সেই ভবানীনগরের নিকটস্থ গ্রাম।