পাতা:রামচন্দ্রের বক্তৃতাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ১৩৯ ] রামকৃষ্ণদেব যে সাধনার কথা বলিয়াছেন, তাহার উদ্দেশু স্বতন্ত্র, ভগবান লাভ করিবার যে সাধনা, তিনি তাহারই কথা বলিয়া গিয়াছেন । মালা জপকরাও সাধনা, হরি নাম করাও সাধনা, একাদশীর উপবাস করাও সাধনা, আসন অভ্যাস করাও সাধনা, এবং ভগবান লাভ করাও সাধনা । কিন্তু এই সকল সাধনার কি তারতম্য নাই ? এক কাঠা জমির অধীশ্বরকে জমিদার বলা যায় বটে, একটী প্রজ থাকিলেও জমিদার নামে পরিকীর্তিত হইতে পারেন বটে, কিন্তু ক্টাহাকে কি বৰ্দ্ধমানাধিপতির সহিত একাসনে বসান যায় ? তেমনি সাধনী বলিলে তাহারও অবস্থান্তর আছে । সাধারণ কথায় যাহাকে সাধন বলে, তাহার দ্বারা ইহজীবনে ভগবানের সাক্ষাৎলাভ করা যায় ন । কমে ক্রমে জন্মজন্মান্তরে অগ্রসর হইয়া কোন সময়ে, হয়ত সাধক সিদ্ধ মনোরথ হইতে পারেন, না হয় পুনরায় পদস্থলিত হইয়। অধঃপতিত হইয়া যান। এ প্রকার সাধনের কথা রামকৃষ্ণদেব বলেন নাই । তাহার এ কথা অনুমোদন না করিবার হেতু এই যে, আজ কাল পর জন্ম না মানিয়া অনেকে ভগবান লাভ করিতে চাহেন, যাহারা ভগবান লাভের প্রত্যাশ করেন, তাহাদের পক্ষে কামিনী-কাঞ্চন সম্বন্ধ একেবারেই থাকিবে না, ইহাই প্রভু স্পষ্টাক্ষরে বলিয়া গিয়াছেন । ইতিপূৰ্ব্বের বক্ততাদির অনেক স্থলে বলিয়াছি যে, মনে কামিনীকাঞ্চন ভাব থাকিলে তাহাকে সঙ্কল্প বা কামনা কহে। কামনা সংযুক্ত নরনারীর গতি পুথিবীতে । তাহার। পার্থিব সুখের জন্য লালায়িত হইয়া থাকেন, তাহারা তাহারই অনুসন্ধান করেন এবং তাহ প্রাপ্ত হইলে স্থির হইয়া সম্ভোগ করেন। র্তাহীদের ভগবান লাভ হইবে কেন ? তাহারা তাহাকে চাহেন না। অতএব কামনা বা সঙ্কল্পবিবর্জিত মন ব্যতীত ভগবানের সাধনার অধিকার হয় না ।