পাতা:রামচন্দ্রের বক্তৃতাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ 8૨૧ ] কি কখন তুলনা হয় ? সংক্ষেপে পরম্পর কতদূর প্রভেদ দেখিয়া লও। তুমি,এখনও অগ্রসর হইতে চাও, তাহার সেরূপ চাহে না। স্বাধীন বৃত্তির ফল এই । দেখ কাঠুরিয়া ! জীবন-ব্যবসার প্রথমে অর্থের দ্বারা উৎকর্ষ সাধন করিতে হয় বটে, কিন্তু তাহাই চরম নহে। বাপু ! অর্থের পর পরমার্থ লাভ করিতে পারিলে ব্যবসার রঙ্গমঞ্চে যবনিক নিপতিত হইয়া যায়। জীবনের তাহাই শেষ সীমা জানিবে। তুমি অর্থের ব্যবহার জানিয়াছ, অর্থের শক্তি কতদূর বুঝিয়াছ, অর্থের দ্বারা জীবনের কি হয় না হয়, তাহা বিলক্ষণরূপে হৃদয়ঙ্গম করিয়াছ, এখন আইস, তোমায় পরমার্থ লাভের উপায় বলিয়া দি। দেখ কাঠুরিয়া ! শাস্ত্রে বলে যে, বিবেক বৈরাগ্য ব্যতীত পরমার্থ লাভ হয় না। একথা সত্য বটে, কিন্তু তুমি আপনি বুঝিয়া দেখ যে, তোমার সে কাৰ্য্য হইয়া গিয়াছে। লোকে সামান্ত অর্থের মায়ার উচ্ছেদ করিতে অশক্ত হয়। তুমি এই ঐশ্বৰ্য্য ত্যাগ করিয়া আসিয়াছ, ইহাতে প্রকৃত বৈরাগ্যের কার্য্য হইয়াছে। আর এগিয়ে যাইতে হইবে, ইহা তোমার বিবেকের কথা । অতএব তুমি বিবেকী এবং বৈরাগী। হে বিবেকী ! হে বৈরাগী ! তোমাকে দেখিয়া আমি আনন্দে বিহ্বল হইয়। যাইতেছি। তুমি আর কি সাধন করিবে ? আর কি কঠোর ব্রত অবলম্বন করিবে ? ঐ দেখ ! ভগবান, করুণানিধান তোমার জন্য আপনি লীলারূপধারণপূর্বক অবস্থিতি করি তেছেন। অপার সৌভাগ্যবলে কাঠুরিয়া তুমি আজ নরলোকের দৃষ্টাস্ত স্বরূপ ” এই বলিয়া সেই ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণ অদ্রগু হইয়া শঙ্খচক্ৰগদাপদ্মধারী বিষ্ণুরূপে কাঠুরিয়ার সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন। কাঠুরিয়া প্রাণ ভরিয়া জগদানন্দের আনন্দ-ঘন-মূৰ্ত্ত দর্শন, স্পর্শনাদি করিয়া যে কিরূপ আনন্দিত হইল, তাহা বর্ণনাতীত, বাক্যাতীত, এবং মানব প্রবৃত্তির দুজ্ঞেয় বস্তু ।