পাতা:রামচন্দ্রের বক্তৃতাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ 8s তখন ঈশ্বর বিষয় বিনা সাধনে কি কখন কাহার ধারণা হইতে পারে ? সাধন ভিন্ন ঈশ্বর লাভ হয় না, সাধন ব্যতীত ঐশ্বরিক জ্ঞান হয় না, সাধন ব্যতীত কোন কাৰ্য্যই হইবার নহে। যিনি যে প্রকার পাত্র, যিনি যে প্রকার দেশে বাস করেন, যিনি যে প্রকার অবস্থায় আছেন, তিনি সেই প্রকার সাধন করিতে অবশুই বাধ্য । বুঝিলাম সাধন না করিলে সাধ্যবস্তু লাভ হয় না, কিন্তু সাধন করি কখন ? যখন দেশ কাল পাত্র এবং উদ্দেশু, এই কারণচতুষ্টয় পরস্পর সহায়তা না করিলে সাধন কাৰ্য্য সিদ্ধ হইবে না, তখন আমাদের সে আশা দুরাশা মাত্র। যে শোণিতসূত্রে জন্ম তাহা কামিনীকাঞ্চনভাবে কলুষিত, যে দেশে বাস তাহ কামিনীকাঞ্চনভাবে কলুষিত, যে সময়ে । আমরা পতিত হইয়াছি, তাহাও কামিনীকাঞ্চনভাবে কলুষিত, যে উদ্দেশানুসরণ করিতেছি, তাহাও কামিনীকাঞ্চনভাবে কলুষিত। এ অবস্থায় ঈশ্বর সাধন হইবে কিরূপে ? মুষলমানদিগের প্রথম রাজ্যাধিকারের সময় কোন হিন্দুকে মুষলমানেরা বলিয়াছিল যে, “বলু আল্লা।” তিনি অমনি “জগদম্বা” বলিয়া উঠিলেন ; মুষলমানের বলিল, যদ্যপি আল্লা না বলিস্, তাহ হইলে তোর মুখে খুৎকার করিয়া দিব। তিনি পুনরায় জগদম্ব বলিয়া কহিলেন, “মহাশয় ! আমি কি করিব। আমার ভিতর জগদম্বা পরিপূর্ণ হইয়। এতদুর বিস্তীর্ণ হইয়াছেন যে, সৰ্ব্ব শরীরের লোম রন্ধ, দিয়া তিনি বাহির হইয়া আমায় বৰ্ম্মারতের ন্যায় ঢাকিয়া রাখিয়াছেন, নয়ন দিয়া জগদম্ব বাহির হইয়া সম্মুখে নৃত্য করিতেছেন। যতক্ষণ মুখ বন্ধ করিয়া রাখি, জগদম্বা হৃদয় হইতে মুখের ভিতরে আসিয়া সঞ্চিত হইয়া থাকেন। তোমাদের কথা বলিব বলিয়া যখনই মুখখুলি, অমনি জগদম্বা উহা ভাসাইয়া লইয়া যান। আমার মুখের ভিতরে আর স্থান নাই, জগদম্বায় পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে।”