পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ-সমাজ।

পরিত্যাগ করিয়া একেশ্বর-বাদী হওয়ার পর তাঁহাকে শ্রীরামপুরের বাপ্তিষ্টমিশনারিগণের সংশ্রব পরিত্যাগ করিতে হয়। তদবধি শ্রীরামপুরের মিশনারিগণ রামমোহন রায়ের প্রতি জাতক্রোধ হন; এবং বৈরভাবে তাঁহাকে আক্রমণ করিতে আরম্ভ করেন। এই উপলক্ষে খ্রীষ্টীয়দিগের সহিত রামমোহন রায়ের ঘোরতর বাগযুদ্ধ উপস্থিত হয়। রামমোহন রায় উপর্য্যুপরি Precepts of Jesus, Appeals to the Christian public, Brahmanical Magazine প্রভৃতি মুদ্রিত ও প্রচারিত করেন। অগ্রে হিন্দুগণ তাঁহার বিরোধী ছিলেন, এক্ষণে খ্রীষ্টীয়গণও বিরোধী হইলেন। রামমোহন রায় কিছুতেই স্বীয় অভীষ্টপথ পরিত্যাগ করিবার লোক ছিলেন না। মিশনারিগণ আপনাদের প্রেসে তাঁহার লিখিত ইংরাজী গ্রন্থ মুদ্রিত করিতে অস্বীকৃত হইলে, তিনি ধর্ম্মতলাতে “ইউনিটেরিয়ান প্রেস” নামে একটা প্রেস স্থাপন করিলেন; হরকরা নামক তদানীন্তন ইংরাজী সংবাদ পত্রের আফীস গৃহের উপরতালায় তাঁহার বন্ধু এডামের জন্য সাপ্তাহিক উপাসনার ব্যবস্থা করিলেন; আচার্য্যরূপে এডামের ভরণ পোষণার্থ অর্থ সংগ্রহ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন; এবং স্বীয় সস্তানগণ ও বন্ধুগণ সহ তাঁহার উপাসনালয়ে গতায়াত করিতে লাগিলেন এরূপ জনশ্রুতি আছে, যে বন্ধুবর এডামের জন্য রামমোহন রায় দশ হাজার টাকা দিয়াছিলেন। ইহা তিনি নিজে দিয়াছিলেন কি চাঁদা তুলিয়া দিয়াছিলেন বলিতে পারি না। বোধ হয় ইহার অধিকাংশ তাঁহার প্রদত্ত ও অপরাংশ বন্ধুদিগের মধ্য হইতে সংগ্রহ করিয়া থাকিবেন।
 লর্ড আমহার্ষ্ট বাহাদুরের রাজত্বের প্রারম্ভেই সহমরণ নিবারণের জন্য যে আন্দোলন উঠিয়াছিল, তাহা এই ১৮২৮ সালেও সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত হয় নাই। সে বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদিগের মত জানা, ইংলণ্ডর প্রভুদিগের সহিত চিঠী পত্র লেখা, নানা স্থান হইতে সহমরণ প্রথা সম্বন্ধীয় সংবাদ সংগ্রহ করা হইতেছিল। তৎকালের নিজামত আদালতের কোর্টনি স্মিথ, (Courtney Smith) আলেকজণ্ডার রস (Alexander Ross) আর, এইচ্, রাট্রে (R. H. Rattray) প্রভৃতি বিশিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ ঐ প্রথা নিবারণের জন্য পরামর্শ দিয়াছিলেন। কোন কোনও উচ্চপদস্থ কর্ম্মচারী সতর্কতায় পক্ষাবলম্বন করিয়া বলিয়াছিলেন যে প্রথমে নন-রেগুলেশন প্রদেশে চেষ্টা করিয়া দেখা উচিত, প্রজারা সহ্য করে কি না। এই সকল সংবাদ ও মত সংগ্রহ করিতে ১৮২৭ সাল অতীত হইয়া গেল। ১৮২৮ সালের