পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
১১৯

তাঁহার অবলম্বিত ধর্ম্ম যাজন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। এইখানে অবস্থান কালে সুপ্রসিদ্ধ প্রসন্নকুমার ঠাকুরের একমাত্র পুত্র জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর খ্রীষ্টধর্ম্ম অবলম্বন করেন; এবং তাঁহার কন্যা কমলমণিকে বিবাহ করেন।
 ১৮৪৫ সাল হইতে গবর্ণর জেনেরাল লর্ড হার্ডিঞ্জ বাহাদুরের প্ররোচনায় তিনি “সর্ব্বার্থ সংগ্রহ” নামে জ্ঞান-গর্ভ মহা-কোব স্বরূপ গ্রন্থ সকল প্রণয়ন করিতে আরম্ভ করেন। তাঁহার কার্য্যে প্রীত হইয়া, ১৮৪৬ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ তাঁহাকে একখান এলফিনষ্টোন প্রণীত ভারতবর্ষের ইতিহাস উপহার দিয়াছিলেন। ১৮৫১ খ্রীষ্টাব্দে মহাত্মা বাটন বা বেথুনের মৃত্যু হইলে তাঁহার নামে যে সভা স্থাপিত হয়, কৃষ্ণমোহন তাহার সভাপতি নির্ব্বাচিত হন। ১৮৫২ সালে তিনি বিশপ কালেজের অধ্যাপকের পদে মনোনীত হইয়া শিবপুরে গিয়া বাস করেন। ১৮৬১-৬২ সালে হিন্দু ষড়দর্শন বিষয়ে প্রভূত গবেষণাপূর্ণ এক গ্রন্থ প্রকাশিত করেন। ১৮৬৮ সালে শিবপুরে তাঁহার, জীবনের সুখ দুঃখের সাঙ্গনী বিন্ধ্যবাসিনী দেবীর মৃত্যু হয়। ঐ ১৮৬৭-৬৮ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নিযুক্ত হন। ১৮৭৫ সালে Aryan Witness “আর্য্য শাস্ত্রের সাক্ষ্য” নামে এক পুস্তক প্রকাশ করেন। ১৮৭৬ সালে লর্ড নর্থব্রুকের পরামর্শে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁহাকে ডাক্তার উপাধি প্রদান করেন। ১৮৭৮ সালে তিনি ভারতসভার সভাপতিরূপে মনোনীত হন। ১৮৮০ সালে কলিকাতার অধিবাসিগণ তাঁহাকে মিউনিসিপালিটাতে আপনাদের প্রতিনিধিরূপে বরণ করেন। মিউনিসিপালিটীতে সকলে তাঁহাকে নির্ভীক সত্যনিষ্ঠ ও অধর্ম্ম-বিদ্বেষী লোক বলিয়া জানিত। তিনি স্বকর্ত্তব্য-সাধনে কখনই অপরের মুখাপেক্ষা করিতেন না। এইরূপে চিরদিন তিনি স্বদেশে বিদেশের লোকের আদরসন্ত্রম পাইয়া সকলের সন্মানিত হইয়া কাল কাটাইয়া গিয়াছেন। ১৮৮৫ সালে কৃষ্ণমোহন স্বৰ্গারোহণ করেন!

রামগোপাল ঘোষ।

 ডিরোজিওর শিষ্যদলের অগ্রণীদিগের মধ্যে ডাক্তার কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই রামগোপাল ঘোষ সর্ব্বাপেক্ষা অধিক কৃতী ও যশস্বী হইয়া ছিলেন; সুতরাং তাঁহার জীবনচরিত সংক্ষেপে বর্ণন করা যাইতেছে।