পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
১২৩

রাখিয়া, তাঁহার চিকিৎসা ও শুশ্রূষার সমুচিত ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। যেমন সহৃদরতা তেমনি সত্যপরায়ণতা। ঠিক সময়টা জানিতে পারি নাই, শুনিয়াছি তাঁহার পিতামহের যখন মৃত্যু হইল, তখন তাঁহার স্বসমাজস্থ লোকেরা তাঁহাকে হিন্দুধর্ম্মবিদ্বেষী ও স্বজাতিচ্যুত বলিয়া গোলযোগ করিবার উপক্রম করিলেন। ইহাতে তাঁহার পিতা ভীত হইয়া, তাঁহাকে অশ্রুপূর্ণলোচনে একবার এই কথা বলিবার জন্য অনুরোধ করিলেন যে তিনি হিন্দুধর্ম্ম ও হিন্দু সমাজবিরুদ্ধ আচরণ কিছু করেন না। রামগোপাল পিতার কাকুর্তি মিনতিতে ক্লিষ্ট হইয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন। বলিলেন,—“আপনার অনুরোধে আমি সর্ব্ববিধ কার্য্য করিতে এবং সকল ক্লেশ সহিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু মিথ্যা বলিতে পারিব না।” তাঁহার এই সত্যপরায়ণতার কথা দেশে রাষ্ট্র হইয়া গেল; তিনি স্বদেশবাদিগণের চক্ষে অনেক উর্দ্ধে উঠিয়া গেলেন। এই সময়ে আর একটা ঘটনা ঘটিয়াছিল। একবার তাঁহার বাণিজ্য কার্য্যের মধ্যে সংকটকাল উপস্থিত হয়। তখন এরূপ সম্ভাবনা হইয়াছিল, যে তিনি হয়ত নিজের কারবারের দেনা শুধিতে গিয়া একেবারে নিঃস্ব হইয়া যাইবেন। সে সময়ে তাঁহার বন্ধুদিগের মধ্যে অনেকে তাঁহাকে স্বীয় বিষয় বিনামী করিয়া রাখিতে পরামর্শ দিয়াছিলেন। রামগোপাল ঘৃণার সহিত বলিলেন,—“আমার সর্ব্বস্ব যায় সে ও ভাল, আমি উত্তমর্ণদিগকে প্রতারণা করিতে পারিব না।”

 তাঁহার সহৃদয়তা ও সত্যপরারণতার ন্যায় আত্মোন্নতির বাসনা ও পরোপকার প্রবৃত্তি প্রবল ছিল। তাঁহার ১৮৩৮ সালের লিখিত দৈনিক লিপি আমার সম্মুখে রহিয়াছে; তাহাতে দেখিতেছি এমন দিন যায় নাই, যে দিন তিনি কিছু না কিছু না পড়িতেছেন, বা জ্ঞানোন্নতি সাধনে নিযুক্ত না আছেন। যে দিন কিছু ভাল বিষয় পড়িতেছেন না সে দিন দুঃখ করিতেছেন। তিনি বিষয় কর্ম্মে প্রবৃত্ত হইলেও প্রতিদিন তাঁহার বন্ধুগণের মধ্যে দুই চারি জন তাঁহার ভবনে আসিতেন, তাহাদের সঙ্গে সদালাপে ও সৎগ্রন্থ পাঠে সুখে কাল কাটিত।

 এই সময়ে তাঁহার কতিপয় বন্ধু মিলিয়া আত্মোন্নতির জন্য যে যে উপায় অবলম্বন করিয়াছিলেন, সংক্ষেপে তাহার কিছু কিছু উল্লেখ করিতেছি। একাডেমিক এসোসিয়েসন ত ছিলই। ডিরোজিওর মৃত্যুর পর তাহা হেয়ারের স্কুলে উঠিয়া আসে। কিন্তু তাহার পূর্ব্ব প্রভাব আর রহিল না। তথাপি রামগোপাল প্রভৃতি ডিরোজিওর শিষ্যগণ তাহাকে ১৮৩৯ সাল পর্য্যন্ত জীবিত