পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

পুস্তকালয়ের অভাব অনুভব করিতে লাগিলেন। তদনুসারে প্রধানতঃ তাঁহার চেষ্টাতে, ১৮৫৮ সালে একটা সাধারণ পুস্তকালয় স্থাপিত হইল।

 এখানেই তাঁহার শ্রমের বিরাম হইল না। হিন্দুকালেজে পাঠকালে তিনি স্ত্রীশিক্ষার আবশ্যকতা বড়ই অনুভব করিয়াছিলেন; এবং ১৮২৬ সালে হুগলী জেলার গোপালনগরের বৈদ্যনাথ ঘোষের কন্যার সহিত তাঁহার পরিণয় হইলে, তিনি স্বীয় বালিকা পত্নীকে বাঙ্গালা লিখিতে ও পড়িতে শিখাইতে আরম্ভ করেন। প্রৌঢ়াবস্থাতেও তাঁহার সে উৎসাহ মন্দ্রীভূত হয় নাই। যখন যেখানে গিয়াছেন, সর্ব্বত্রই পণ্ডিত নিযুক্ত করিয়া আপনার কন্যাদিগের শিক্ষার বন্দোবস্ত করিয়াছেন। তৎপরে মহাত্মা বেথুন কলিকাতাতে তাঁহার সুপ্রসিদ্ধ বালিকা-বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করিলে, দলপতিদিগের মহা আন্দোলন সত্ত্বেও তিনি আপনার এক কন্যাকে ঐ স্কুলে ভর্ত্তি করিয়া দিয়াছিলেন। স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ে এরূপ যাঁহার উৎসাহ, তিনি যে স্বীয় বাসগ্রামের বালিকাগণের শিক্ষার উপায় বিধান না করিয়া স্থির থাকিবেন ইহা সম্ভব নহে। ১৮৫৮ সালে তিনি গবর্ণমেণ্টের নিকট এই প্রস্তাব করিলেন যে, গবর্ণমেণ্ট যদি বালিকাস্কুলের গৃহনির্ম্মাণার্থ ৫০০ পাঁচ শত টাকা দেন, তাহা হইলে তিনি নিজে আর ৫০০ পাঁচ শত টাকা দিতে পারেন, এবং তাহার ব্যয় নিৰ্বাহার্থ গবর্ণমেণ্ট মাসিক ৪৫ টাকা দিলে তিনি ১৫ টাকা চাঁদা তুলিতে পারেন। অনেক লেখালিথির পরে গবর্ণমেণ্ট সে প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিলেন।

 শিবচন্দ্র বাবু তাহাতে নিরুদাম না হইয়া, স্বীয় চেষ্টায়, স্বীয় অর্থে স্বীয় ভবনে, ১৮৬০ সালে একটা বালিকা-বিদ্যালয় স্থাপন করিলেন। কিছুদিন পরে তাঁহারই প্রদত্ত ভূমিখণ্ডের উপরে, তাঁহারই ব্যয়ে ঐ বিদ্যালয়ের জন্য একটা গৃহ নির্ম্মিত হইল। তাহাতে বালিকা-বিদ্যালয় উঠিয়া গেল এবং এখনও সেইখানে আছে।

 কেবল তাহা নহে, ১৮৬২ সালে তিনি শিক্ষিত নারীদিগের ব্যবহারার্থ “শিশুপালন” নামে একখানি গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া মুদ্রিত করলেন। পরে ১৮৬৭ সালে “অধ্যাত্মবিজ্ঞান” নামে প্রেততত্ত্ব বিষয়ে একখানি গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়াছিলেন।

 অগ্রে কোন্নগরে ইষ্টইণ্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির ষ্টেশন ছিল না। কোন্নগরবাসাদিগকে হয় বালী ষ্টেশনে, না হয় শ্রীরামপুর ষ্টেশনে গিয়া গাড়িতে উঠিতে হইত; তাহাতে তাঁহাদের বিশেষ অসুবিধা হইত। এই অসুবিধা