পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ।

হইয়াছিল। প্রথম দীক্ষাগুরু ডেভিড হেয়ার, দ্বিতীয় দীক্ষাগুরু ডিরোজিও, তৃতীয় দীক্ষাগুরু মেকলে। তিন জনই তাঁহাদিগকে একই ধূয়া ধরাইরা দিলেন;—প্রাচীতে যাহা কিছু আছে তাহা হেয়, এবং প্রতীচীতে যাহা আছে তাহাই শ্রেয়ঃ। এই অতিরিক্ত প্রতীচ্য-পক্ষপাতিতার ঝোঁকে বঙ্গসমাজ বহুকাল ঢলিয়া আসিয়াছে। তাহার বিবরণ পরে প্রদত্ত হইবে।

 রামগোপাল ঘোষের ভবনে এই যুবকদলের এক আড্ডা ছিল। তাঁহার বন্ধুগণের মধ্যে রামতনু লাহিড়ী তাঁহার অতিশয় প্রিয় ছিলেন। লাহিড়ী মহাশয়কে তিনি আদর করিয়া “তনু” “তনু” বলিয়া ডকিতেন। প্রায় প্রত্যেক দিন সন্ধ্যাকালে লাহিড়ী মহাশয় প্রিয়বন্ধু রামগোপালের ভবনে যাইতেন; এবং অনেক দিন সেইখানে রাত্রি যাপন করিতেন। এই বন্ধুবর্গের সমাগমকাল অতি সুখেই কাটিত। মধ্যে মধ্যে শেরী শ্যাম্পেন চলিত বটে, কিন্তু সদ্‌গ্রন্থ পাঠ ও সৎপ্রসঙ্গেই অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হইত। রামগোপাল ঘোষের দৈনিক লিপিতে দেখিতেছি যে এই যুবকদল একত্র সমবেত হইলেই কোন না কোন হিতকর প্রসঙ্গ উপস্থিত হইত ও সদালাপে সময় চলিয়া যাইত। সকলেরই মনে জ্ঞান-স্পৃহা অতিশয় উদ্দীপ্ত ছিল। পরস্পরের জ্ঞানোন্নতির জন্য তাঁহারা নানাবিধ উপায় অবলম্বন করিয়াছিলেন। তাহার কতকগুলি অগ্রে উল্লেখ করা গিয়াছে; যথা “জ্ঞানান্বেষণ” পত্রিকা। রসিককৃষ্ণ মল্লিক এই দ্বিভাষী পত্রিকায় প্রথম সম্পাদক ছিলেন। তিনি কর্ম্মস্থত্রে সহর পরিত্যাগ করিলে তাঁহার যুবক বন্ধুগণ তাঁহার সম্পাদনের ভার গ্রহণ করেন।

 ডিরোজিওর মৃত্যুর পর “একাডেমিক এসোসিএশন” স্কোরের স্কুলে, উঠিয়া আসে। এই যুবকদল মহামতি হেয়ারকে তাঁহার সভাপতিরূপে বরণ করিয়া সভার কার্য্য চালাইতে থাকেন। দুঃখের বিষয় ১৮৪৩ সালের মধ্যে ঐ সভা উঠিয়া যায়। এই নব্যৱঙ্গের নেতৃগণ নিরুদ্যম না থাকিয়া, আপনাদের জ্ঞানোন্নতির জন্য নিজেদের মধ্যে একটী সার্কুলেটিং লাইব্রেরী ও একটা এপিষ্টোলারি এসোশিএশন স্থাপন করেন। লাইব্রেরী হইতে উংকৃষ্ট উংকৃষ্ট গ্রন্থ ক্রয় করিয়া বন্ধুগণের পাঠের জন্য বিতরণ করা হইত; এবং এপিষ্ট্রোলারি এসোসিএশনের যোগে কে কি পড়িলেন, সে বিষয়ে চিঠি পত্রে আলাপ হইত। রামগোপাল ঘোষ ও লাহিড়ী মহাশয় এই দুই কার্য্য প্রধানভাবে দেখিতেন।