পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

ও তাঁহার পতি প্রিন্স এলবার্ট, ফ্রান্সের রাজা ও রাণী প্রভৃতি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণের বন্ধুতা লাভ করিয়াছিলেন। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির কর্ত্তৃপক্ষও তাঁহার প্রতি সমান প্রদর্শন করিতে ক্রটী করেন নাই। বলিতে কি তিনি সর্ব্বত্রই রাজোচিত সম্ভ্রম প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।

 দ্বারকানাথ ঠাকুরের ইংলণ্ড-যাত্রার পর তৎপরবর্ত্তী এপ্রিল মাসে রাম গোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র প্রভৃতি সমবেত হইয়া বেঙ্গল স্পেক্টেটর (Bengal Spectator) নামে এক সংবাদপত্র বাহির করিলেন। এই পত্র ইংরাজী ও বাঙ্গালী দুই ভাষাতে লিখিত হইত এবং প্রথম প্রথম মাসে একবার প্রকাশিত হইত। এই পত্রে নব্য যুবকদল সাধ মিটাইয়া আপনাদের উদার মত সকল প্রচার করিতে লাগিলেন। এই পত্র ১৮৪৩ সালে মার্চ্চ মাস হইতে সাপ্তাহিক আকারে পরিণত হয়; পরে নবেম্বর হইতে সাহায্যাভাবে উঠিয়া যায়।

 কিন্তু আর এক কারণে এই ১৮৪২ সাল বঙ্গদেশের পক্ষে চিরস্মরণীয় দুর্ব্বৎসর। ঐ বৎসরে মহামতি হেয়ার ভবধাম পরিত্যাগ করিলেন। সেকালের লোকের মুখে যখন তাঁহার মৃত্যুদিনের বিবরণ শ্রবণ করি তখন শরীর কণ্টকিত, চক্ষুদ্ধয় অশ্রুতে প্লাবিত, এবং হৃদয় ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা রসে আপ্লুত হয়। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে হেয়ার সাহেব আপনার ঘড়ির কারবার গ্রে (Grey) নামক তাঁহার এক বন্ধুকে বিক্রয় করিয়া তাঁহারই সঙ্গে বর্ত্তমান কয়লাঘাটের নিকটস্থ এক ভবনে বাস করিতেন। সেখানে ১৮৪২ সালের ৩১ শে মে দিবসে রাত্রি ১টার সময়ে তিনি হঠাৎ দারুণ ওলাউঠা রোগে আক্রান্ত হন। তিনি আমরণ কৌমার্য্য ব্রত ধারণ করিয়াছিলেন, সুতরাং সে সময়ে তাঁহার প্রিয় বেহারা ব্যতীত আর কেহ তাহার সঙ্গী ছিল না। দুই একবার দাস্ত ও বমন হওয়াতেই হেয়ার বুঝিলেন যে কালশক্র তাঁহাকে ধরিয়াছে। নিজের বেহরাকে বলিলেন—“গ্রে, সাহেবকে গিয়া আমার জন্য কফিন (শবাধার) আনাইতে বল”। প্রাতঃকালে ডাক্তার ডাকা হইল। তাঁহার প্রিয় ছাত্র মেডিকেল কলেজের উত্তীর্ণ সুযোগ্য ডাক্তার প্রসন্নকুমার মিত্র আসিয়া উপস্থিত হইলেন; এবং বিধিমতে তাঁহার প্রাণ রক্ষা করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। চিকিৎসা বিদ্যাতে যাহা হয়, ঔষধে যাহা করিতে পারে; বন্ধুজনের যত্ন, আগ্রহ ও চেষ্টাতে যাহা সম্ভব, কিছুই বাকি রহিল না। কিন্তু কিছুতেই রোগের উপশম হইল না। রোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতে