পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
১৭৫

করিতেন, যাঁহাকে প্রতিবেশিগণ সাক্ষাৎ লক্ষ্মী বলিয়া সম্বোধন করিতেন, যিনি নিতান্ত দারিদ্র্যে বাস করিয়াও অপেক্ষাকৃত সম্পন্ন পিতৃকুলের আশ্রয় গ্রহণ করিতেন না, যিনি সতত, তেজস্বিত ও সত্যনিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্বরূপ ছিলেন, সেই জননীর সেবা তাঁহার পুত্রগণ কিরূপে করিয়াছিলেন, তাহা বলা নিম্প্রয়োজন। লাহিড়ী মহাশয় এ সময়ে যেরূপ মাতৃসেবা করিয়াছিলেন সেরূপ মাতৃসেবা কেহ কখনও দেখে নাই। তাঁহার সহধর্ম্মিণী তখন বালিকা, কিন্তু ঐ মাতৃসেবার কথা চিরদিন তাঁহার স্মৃতিতে মুদ্রিত ছিল। চিরদিন পুলকিতচিত্তে নিজের সন্তানগণের নিকট সেই মাতৃসেবার বিষয় বর্ণন করিতেন।

 জননী কলিকাতায় আসা অবধি লাহিড়ী মহাশয়ের আহার নিদ্রা রহিত হইয়াছিল। কোনও প্রকারে স্কুলে গিয়া স্বীয় কর্ত্তব্য সমাধা করিয়া দিন রাত্রি মায়ের পার্শ্বে যাপন করিতেন; ভূত্যের ন্যায় তাঁহার আদেশ পালন করিতেন; পুত্রের ন্যায় তাঁহার চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতেন; মেথরের ন্যায় তাঁহার মলমূত্র দক্ষিণ হস্তে পরিষ্কার করিতেন; এবং কন্যার ন্যায় তাঁহার রোগশয্যাকে আরামের স্থান করিবার প্রয়াস পাইতেন। দুঃখের বিষয় জননী আর সে পীড়া হইতে উত্তীর্ণ হইতে পারিলেন না। সেই রোগে কলিকাতা সহরেই তাঁহার মৃত্যু হয়।

 তৎপরে ১৮৪৬ সালের প্রারম্ভে কৃষ্ণনগর কালেজ খোলা হইলে লাহিড়ী মহাশয় তাহার স্কুল ডিপার্টমেণ্টের দ্বিতীয় শিক্ষক হইয়া গমন করিলেন। তাঁহার কৃষ্ণনগর গমন স্থির হইলে, তাঁহার যৌবন-সুহৃদগণ আপনাদের মধ্য হইতে চাঁদা করিয়া নিজেদের গভীর প্রীতি ও শ্রদ্ধার চিহ্ন স্বরূপ তাঁহাকে একটা ঘড়ি উপহার দিলেন। যে কয়জন বন্ধুর প্রতি ঐ ঘড়ি লাহিড়ী মহাশয়ের হস্তে অর্পণ করিবার ভার ছিল, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহাদের অগ্রণী ছিলেন। লাহিড়ী মহাশয় ঐ, ঘড়িটী মহামূল্য সম্পত্তি জ্ঞানে চিরদিন রক্ষা করিয়া আসিয়াছেন।