পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
১৭৭

বালকদিগের জ্ঞাতব্য যাহা কিছু আছে তাহা সমগ্রভাবে না বলিয়া সস্তুষ্ট হইতে পারিতেন না। পড়াইতে পড়াইতে যদি আরবের নাম কোথাও পাইলেন তাহা হইলে আরবের প্রাকৃতিক অবস্থা, তাহার অধিবাসীদের স্বভাব ও প্রকৃতি, মহম্মদের জন্ম ও ধর্ম্ম প্রচারের বিবরণ প্রভৃতি বালকদিগকে না জানাইয়া সন্তুষ্ট হইতে পারিতেন না। এইরূপ অধ্যাপনায় পাঠ্যগ্রন্থগুলি পাঠের বিষয়ে বিশেষ উন্নতি লক্ষিত হইত না বটে, কিন্তু বালকের যথার্থ জ্ঞান লাভ করিত; এবং তাহা অপেক্ষা অধিক প্রশংসার বিষয় এই যে ইহা তাহাদের অন্তরে জ্ঞানানুরাগ উদ্দীপ্ত করিত। কেবল তাঁহা নহে তিনি কালেজের ছুটীর পর ডিরোজিওর ন্যায় বালকদিগের সহিত কথাবার্তাতে অনেকক্ষণ যাপন করিতেন। অনেক সময়ে কলেজের মাঠে তাহাদের সঙ্গে খেলিতেন। এইভাবে তাঁহার কৃষ্ণনগরের শিক্ষকতা কার্য্য আরম্ভ হইল।

 এই সময়ে দুই দিক হইতে দুই স্রোত আসিয়া ক্ষুদ্র কৃষ্ণনগর সমাজে মহা তরঙ্গ উত্থিত করিল। তাহার বিবরণ ক্ষিতীশবংশাবলি-চরিত হইতে উদ্ধৃত করা যাইতেছেঃ—

 “১২৪৩ কি ৪৪ বাং অব্দে কৃষ্ণনগরনিবাসী দেশহিতৈষী শ্রীযুক্ত শ্রীপ্রসাদ লাহিড়ী (রামতনু বাবুর কনিষ্ঠ) নিজ নিকেতনে এক অবৈতনিক ইংরাজী বিদ্যালয় স্থাপন করেন। * * * তৎকালে শ্রীপ্রসাদের স্বদেশীয় প্রচলিত ধর্ম্মের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ছিল, সুতরাং তিনি প্রথমে এই ধর্ম্মবিরুদ্ধ কোনও উপদেশ দিতেন না। কিয়ৎকালানন্তর তিনি ও তাঁহার সমবয়স্ক দুই তিন জন ছাত্র স্বদেশের ধর্ম্ম ও রীতি-নীতির গুণাগুণের বিষয় আলোচনা করিতে আরম্ভ করেন; এবং ক্রমশঃ সাকার উপাসনার অলীকতা ও প্রচলিত আচার ব্যবহারের দোষ গুণ বুঝিতে পারেন। তিনি পূর্ব্বে ছাত্রগণের মনোবৃত্তির উন্নতিসাধনে যেমন যত্ন করিতেন, ইদানীং ধর্ম্ম-প্রবৃত্তির উৎকর্ষ সম্পন্ন করণেও তেমনি যত্নবান হইলেন।”

 “কিছুদিন পরে তাঁহার মতাবলম্বী ছাত্রগণ আপন আপন প্রতিবেশী ও আত্মীয়গণের কুসংস্কার দূরীভূত, করিতে প্রগাঢ় যত্ন করিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে সোণাডেঙ্গানিবাসী, অধুনা কৃষ্ণনগরবাসী, শ্রীযুক্ত ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায় এই নগরস্থ মিশনারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। মিশনারিরা তাহাকে খ্রীষ্ট্ৰীয়-ধর্ম্মাবলম্বী করিতে বহু প্রয়াস পাইয়াছিলেন; কিন্তু

 ২৩