পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ-সমাজ।

সফল-প্রযত্ন হইতে পারেন নাই। তিনি এক-ব্রহ্ম-বাদী হইয়াছিলেন বটে, কিন্তু খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্বের প্রতি তাঁহার বিশ্বাস হয় নাই। তিনিও শ্রীপ্রসাদের অনুকরণ করিয়া আপনার ছাত্র ও বান্ধবদিগের দূষিত সংস্কার সকল দূরীভূত করণে প্রবৃত্ত হন; এইরূপে কৃষ্ণনগরে প্রচলিত ধর্ম্মের বিপ্লব ঘটিয়া উঠে। ক্রমে ক্রমে নগরের অনেক যুবা এই অভিনব মতের অনুরাগী হইলেন। যদিও তাঁহাদের বাহ্যিক ভাবের বড় বৈলক্ষণ্য হইল না, কিন্তু আন্তরিক ভাবের প্রভূত পরিবর্ত্তন হইল। নূতন সম্প্রদায়ের আন্তরিক ভাব যে এককালে সাধারণের অগোচর ছিল এমনও নহে, নগরের অনেক প্রধান বংশোদ্ভূত যুবকগণ ঐ সম্প্রদায়ভুক্ত হইয়াছিলেন এবং রাজা তাঁহাদিগকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও আদর করিতেন এই বলিয়া কোনও গোলযোগ উপস্থিত হইত না।”

 শ্রীশচন্দ্র কেবল পূর্ব্বোক্ত ধর্ম্মসংস্কারার্থী যুৱকদলকে আদর শ্রদ্ধা করিতেন তাহা নহে, তিনি নিজে রাজবাটীতে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করিয়া পরব্রহ্মের উপাসনা প্রচারে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। ক্ষিতীশবংশাবলি-চরিতকার আর এক স্থানে লিখিতেছেন:—

 তিনি (শ্রীশচন্দ্র। ১৮৪৪ খৃঃ অন্ধে এ প্রদেশস্থ তিন ব্যক্তিকে ব্রাহ্মধর্ম্মে দীক্ষিত করিয়া রাজা রামমোহন রায়ের স্থাপিত কলিকাতার তদানীন্তন ব্রাহ্ম সমাজের প্রণীত ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণের নিয়ম-পত্রে তাহাদের স্বাক্ষর করাইলেন এবং ব্রাহ্মধর্ম্ম বিস্তার করণার্থ একজন বেদবিৎ উপদেষ্টাকে পাঠাইতে তৎকালীন উক্ত-সমাজাধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুরকে পত্র লিখিলেন। তিনি সহসা বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত না পাইয়া হাজারি লাল নামে একজন ব্রাহ্মধর্ম্ম-প্রচারককে পাঠাইয়া দিলেন। হাজারি একে শূদ্রজাতি তাহাতে আবার খেদবেত্তা ছিলেন না, একারণ রাজা নিজে সাতিশয় ক্ষুণ্ণমনা হইলেন। তৎকালে রাজার নিকট ভাটপাড়া-নিবাসী গোবিন্দচন্দ্র বেদান্তবাগীশ নামে একজন পণ্ডিত ছিলেন; তিনি বেদান্ত ও ন্যায় প্রভৃতি শাস্ত্রে সবিশেষ ব্যুৎপন্ন কিন্তু লোকনিন্দা-ভয়ে প্রকাশ্যরূপে বেদান্ত-ধর্ম্ম প্রচারে সন্মত ছিলেন না; সুতরাং রাজা হাজারিকে তৎক্ষণাৎ বিদায় না করিয়া রাজধাটীতে তাহার বাসস্থান নির্দ্দিষ্টি করিয়া দিলেন।

 “দুই তিন দিবস পরে রাজা কোনও প্রয়োজনানুরোধে মুরশিদাবাদে