পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

 যাহা হউক এই চারিট আইনের পাণ্ডুলিপি গবর্ণর জেনারেলের ব্যবস্থাপক সভাতে উপস্থিত হইবা মাত্র এদেশবাসী ইংরাজগণ ইহাদের (Black Acts) “কালা আইন” নাম দিয়া, তদ্বিরুদ্ধে ঘোরতর আন্দোলন উপস্থিত করিলেন। তাহাদের সম্পাদিত সংবাদ-পত্র সকলে ঐ চার আইন প্রণেতাদিগের প্রতি অভদ্র গালাগালি বর্ষণ চলিতে লাগিল। বাটন তাঁহাদের উপহাস, বিদ্রুপ ও আক্রোশের লক্ষ্যস্থলে পড়িলেন। ইংরাজগণ কলিকাতাতে এক মহাসভা করিয়া পার্লিয়ামেণ্টের নিকট আবেদন করা স্থির করিলেন; এবং এদেশে ও ইংলণ্ডে ঐ আন্দোলন চালাইবার জন্য কতিপয় দিবসের মধ্যে ছয়ত্রিশ হাজার টাকা সংগ্রহ করিলেন।

 আন্দোলনে দেশ কাঁপিয়া যাইতে লাগিল। এদেশীয়দিগের পক্ষ হইয়া বলিবার কেহই ছিল না। তাহাদের পক্ষ গুছাইয়া বলিতে পারে এমন সংবাদ পত্রই ছিল না। এদেশীয়গণ নীরবে বাদ-বিতণ্ডা শুনিতে লাগিলেন; এবং সদাশয় রাজপুরুষগণের মুখাপেক্ষা করিয়া রহিলেন। কেবল একমাত্র রামগোপাল ঘোষ উক্ত আইন গুলির পক্ষ হইয়া লেখনী ধারণ করিলেন। তাহার বিবরণ রামগোপালের সংক্ষিপ্ত জীবনচরিতে দেওয়া গিয়াছে।

 অবশেষে আন্দোলনকারী ইংরাজগণের অভীষ্টই পূর্ণ হইল। ইংলণ্ডের কর্তৃপক্ষের আদেশে কালা আইন গুলি ব্যবস্থাপক সভা হইতে অন্তর্হিত হইল। মফস্বলবাসী ইংরাজগণ আরও নিরঙ্কুশ হইয়া উঠিলেন। নীলকরদিগের অত্যাচারে শত শত প্রজার প্রাণ পিষিয়া যাইতে লাগিল।

 অতিরিক্ত শ্রম, অতিরিক্ত চিন্তা ও এই সকল আন্দোলন জনিত উত্তেজনাতে মহাত্মা বাটনের আয়ু সংকীর্ণ করিয়া আনিল। তিনি ১৮৫১ সালের ১২ই আগষ্ট ভবধাম পরিত্যাগ করিলেন। কলিকাতা লোয়ার সার্কুলার রোডস্থ নুতন সমাধিক্ষেত্রে তাঁহার দেহ সমাহিত রহিয়াছে।

 কালা আইনের বিরোধী ইংরাজগণ জয়যুক্ত হইলেন; যে আন্দোলনের ঝড় উঠিয়াছিল তাহা থামিয়া গেল; মহামতি বীটন পরলোক গমন করিলেন; কিন্তু দেশীয় শিক্ষিতদলের মনে একটা গভীর অসন্তোষ থাকিয়া গেল। একতা ও আন্দোলনের দ্বারা কি হয় তাহা তাঁহারা চক্ষের উপরে দেখিলেন। ইংরাজগণ তাঁহাদের চীৎকার-ধ্বনিতে কিরূপে ভুবন কাঁপাইয়া তুলিলেন, কিরূপে দেখিতে দেখিতে শত শত ব্যক্তি একত্র হইলেন, কিরূপে দেখিতে দেখিতে ৩৬ হাজার টাকা তুলিলেন, এ সমুদয় যেন ছায়াবাজীর ন্যায় তাঁহাদের নয়নের