পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রথম পরিচ্ছেদ।

 এই রাজবংশের রাজগণের মধ্যে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রই সমধিক প্রসিদ্ধ। রুদ্রের পুৎত্র রামজীবন; রামজীবনের পুৎত্র রঘুরাম; রঘুরামের পুৎত্র কৃষ্ণচন্দ্র। ১৭১০ খ্রীষ্টাব্দে কৃষ্ণচন্দ্রের জন্ম হয়। ইঁহার জীবদ্দশাতেই বঙ্গদেশ মুসলমান-রাজাদিগের হস্ত হইতে ইংরাজদিগের হস্তে নিপতিত হয়। এই কারণে ইঁহার জীবনবৃত্ত কিঞ্চিৎ বিস্তারিতরূপে বর্ণন করা আবশ্যক বোধ হইতেছে।

 যখন রঘুরামের দেহান্ত (১৭২৮ খ্রীষ্টাব্দে) হয়, তখন কৃষ্ণচন্দ্রের বয়ঃক্রম অষ্টাদশ বৎসর মাত্র ছিল। কিন্তু এই স্বল্প বয়সেই কৃষ্ণচন্দ্রের কার্য্যকুশলতা ও স্বীয় অভীষ্ট সাধনে চাতুরীর বিশেষ প্রমাণ পাওয়া গিয়াছিল। এরূপ জনরব তাঁহার পিতা কোনও অনির্দ্দেশ্য কারণে তাঁহাকে উত্তরাধিকারিত্বে বঞ্চিত করিয়া স্বীয় ভ্রাতা রামগোপালকে রাজ্যের উত্তরাধিকারী করিয়া যান। তদনুসারে রামগোপাল নবাব সন্নিধানে রাজ্যের অধিকার প্রার্থনা করেন। কৃষ্ণচন্দ্র নাকি এক অপূর্ব্ব চাতুরী খেলিয়া স্বীয় পিতৃব্যকে বিষয়ে বঞ্চিত করিয়াছিলেন।

 ইহার কিছুকাল পরে বঙ্গদেশের দক্ষিণ বিভাগে মহারাষ্ট্রীয়দিগের উপদ্রব অত্যন্ত প্রবল হয়। দিল্লীর সম্রাট, মহারাষ্ট্রপতি শিবজীকে শান্ত রাখিবার মানসে, তাঁহাকে দাক্ষিণাত্যের কোন কোনও প্রদেশের চৌথ অর্থাৎ উৎপন্ন শস্যের চারিভাগের এক ভাগ দিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন। শিবজীর মৃত্যুর (১৬৮০ খ্রী) পরে একশতাব্দীর মধ্যেই একদিকে মহাষ্ট্রীয়দিগের অভ্যুত্থান অপরদিকে দিল্লীশ্বরের শক্তির অবসান হইল। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নাগপুরবাসী মহারাষ্ট্রীয়গণ তাহাদের প্রাপ্য চৌথ আদায়ের ছল করিয়া দিল্লীর সম্রাটের অধিকারভুক্ত নানাস্থান আক্রমণ করিতে লাগিল। ক্রমে তাহাদের উপদ্রব বঙ্গদেশেও ব্যাপ্ত হইল। এই মহারাষ্ট্রীয় উপদ্রব বঙ্গদেশের ইতিহাসে বর্গীর হাঙ্গামা নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছে। বর্গীর হাঙ্গামাতে বঙ্গদেশে ধনী দরিদ্র সকলকেই ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল। ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দে নবাব আলিবর্দ্দী খাঁ বাঙ্গালার নবাবী পদে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁহার সময় হইতেই এই বর্গীর হাঙ্গামা আরম্ভ হয়। গঙ্গার পূর্ব্বপারের স্থান সকলে সমৃদ্ধিশালী নগর অধিক ছিল না বলিয়া বর্গীগণ প্রথমে সেদিকে দৃষ্টিপাত করে নাই। এজন্য পশ্চিম পারের অনেক লোক গঙ্গার পূর্ব্বপারে পলাইয়া আসে। অনেকে ফরাসডাঙ্গাতে ফরাসিদিগের আশ্রয়ে আসিয়া বাস করে। অনেকে কলিকাতাতে ইংরাজদের শরণাপন্ন হয়। এই সময়েই বর্দ্ধমানাধিপতি তিলকচাঁদের জননী পুত্রসহ পলাইয়া মুলাযোড়ের