সংস্পর্শে আসিয়া তাঁহার বন্ধুবান্ধব সকলেরই মনে ঐ ইচ্ছা সংক্রান্ত হইয়াছিল। তাহার দৃষ্টান্ত স্বরূপ দুইটী বিষয়ের উল্লেখ করা যাইতে পারে। বিদ্যাসাগর মহাশয় যখন ফোর্ট উইলিয়াম কালেজে প্রতিষ্ঠিত, তখন তথাকার কেরাণীর কর্ম্মট খালি হইলে, তাঁহারই চেষ্টাতে তাঁহার তদানীন্তন বন্ধু বাবু দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সে কর্ম্মটী প্রাপ্ত হন। দুর্গাচরণ বাবু ঐ পদ প্রাপ্ত হইলেই বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহাকে ঐ কর্ম্মে থাকিয়া, মেডিকেল কালেজে ভর্ত্তি হইয়া চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়ন করিতে প্রবৃত্ত করেন। তাহাই দুর্গাচরণ বাবুর সকল ভাবী উন্নতি ও প্রতিষ্ঠার কারণ। ইনি সুপ্রসিদ্ধ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যেপাধ্যায়ের পিতা। এই সময়ে আর এক বন্ধুর দ্বারা আর এক কার্য্যের সূত্রপাত হয়। প্রেসিডেন্সি কালেজের ভূতপূর্ব্ব সংস্কৃতাধ্যাপক রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় অবসরকালে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট সংস্কৃত পড়িতে আরম্ভ করেন। তাঁহাকে সংস্কৃত শিখাইতে প্রবৃত্ত হইয়াই বিদ্যাসাগর মহাশয় অনুভব করিলেন যে, তাঁহারা নিজে যে প্রণালীতে সংস্কৃত শিখিয়াছিলেন সে প্রণালীতে ইঁহাকে শিখাইলে চলিবে না, অনর্থক অনেক সময় যাইবে। সুতরাং নিজে চিন্তা করিয়া এক নূতন প্রণালীতে তাঁহাকে সংস্কৃত পড়াইতে আরম্ভ করিলেন। ইহা হইতেই তাঁহার উত্তর কালে রচিত উপক্রমণিকা ও ব্যাকরণ-কৌমুদী প্রভৃতির সূত্রপাত হইল।
১৮৪৬ সালে সংস্কৃত কালেজের এসিষ্টাণ্ট সেক্রেটারির পদ শূন্য হইলে বিদ্যাসাগর মহাশয় ঐ পদ পাইলেন। কিন্তু উক্ত কালেজের অধ্যক্ষ রসময় দত্ত মহাশয়ের সহিত মতভেদ হওয়াতে দুই এক বৎসরের মধ্যে ঐ পদ পরিত্যাগ করিতে হইল। ১৮৫০ সালের প্রারম্ভে দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় ফোর্ট উইলিয়াম কালেজের কেরাণীগিরি কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া চিকিৎসা ব্যবসায় আরম্ভ করাতে, মার্শেল সাহেবের অনুরোধে, মাসিক ৮০ টাকা বেতনে, বিদ্যাসাগর মহাশয় ঐ কর্ম্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু সে পদে তাঁহাকে অধিক দিন থাকিতে হয় নাই। ঐ সালেই তাঁহার বন্ধু মদনমোহন তর্ক্কালঙ্কার মুর্শিদাবাদের জজ-পণ্ডিতের কর্ম্ম পাইয়া চলিয়া যাওয়াতে সংস্কৃত কালেজের সাহিত্যাধ্যাপকের পদ শূন্য হইল। বিদ্যাসাগর মহাশয় এডুকেশন কাউন্সিলের সভাপতি মহাত্মা বেথুনের পরামর্শে ঐ পদ গ্রহণ করিলেন। সেই পদ হইতে ১৮৫১ সালের জানুয়ারি মাসে সংস্কৃত কালেজের অধ্যক্ষের পদ প্রাপ্ত হন।