পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২৪৫

তাহার একজন শিক্ষিত আত্মীয় বলিয়া দিয়াছেন। তখন প্রীত হইয়া বলিলেন—“এমন শিক্ষিত উপযুক্ত লোক যার ঘরে তার ভাবনা কি?” আর একটা গল্প ইহা অপেক্ষাও সুন্দর। একবার একটা বালক তাঁহার প্রদত্ত কোনও ব্যাখ্যার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করিল। তখন তিনি আর এক বার অধিকতর বিশদরূপে বুঝাইবার চেষ্টা করিলেন; যখন কৃতকার্য হইলেন না, তখন অন্ততম শিক্ষক উমেশচন্দ্র দন্ত মহাশয়কে ডাকিয়া আনিলেন —“তুমি আমার ক্লাসের ছেলেদিগকে ব্যাখ্যা করিয়া বুঝাইয়া দেও।” তখন ছাত্রমহলে, ছাত্রমহলে কেন দেশের শিক্ষিতদলে, সুপ্রসিদ্ধ উমেশচন্দ্র দত্ত মহাশয়ের ইংরাজী ভাষাভিজ্ঞ বলিয়া মহা খ্যাতি ছিল। তিনি আসিয়া যখন বিষয়টা ব্যাখ্যা করিয়া দিলেন, লাহিড়ী মহাশয় বলিলেন– দেখিলে আমি ঠিক ব্যাখ্যাই দিয়াছিলাম, তবে ওর মত আমার ইংরাজীতে বিদ্যা নাই, তাই অমন সুন্দর করে বুঝাতে পারি নাই। ওঁর মত কয়টা মানুষ বাঙ্গাল দেশে ইংরাজী জানে?” বাস্তবিক ইংরাজী বিদ্যা বিষয়ে তাঁহার বন্ধু উমেশচন্দ্র দত্তের প্রতি তাঁহার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ছিল। বাৰ্দ্ধক্যে ইংরাজী ভাষার কোনও বিষয় লইয়া আমাদের সহিত তর্ক হইলে উমেশচন্দ্র দত্ত মহাশয়কে নজীরের মত উল্লেখ করিয়া বলিতেন, “উমেশের চেয়ে তোমরা ইংরাজী জন কি না।”

 তাঁহার এই সময়ের শিক্ষকতা সম্বন্ধে আর একটা কথা শুনিয়াছি, তাহা বোধ হয় শিক্ষকতা কার্য্যের প্রারম্ভ হইতেই তাঁহার চরিত্রে ছিল। অনেক শিক্ষক অনেক সময় ছাত্রদিগের সমক্ষে নিজ অজ্ঞতা প্রকাশ করিতে লজ্জিত হন। নিজে যা জানেন না, সেটাও জানেন এইরূপ দেখান, এবং কোনও রূপে যোড়াতাড়া দিয়া, গোঁজা মিলন দিয়া, ছাত্রদিগকে বুঝাইবার প্রয়াস পান। বলা বাহুল্যমাত্র যে লাহিড়ী মহাশয় এরূপ আচরণকে অতি নিন্দনীয় মনে করিতেন। ছাত্রগণ কোনও প্রশ্ন করিলে, যদি তাঁহার সদুত্তর দেওয়া কঠিন মনে করিতেন, তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ বলতেন—“দেখ এটা আমার জানা নাই, জানিয়া কাল তোমাকে বলিব।” তৎপরে গৃহে গিয়া সে বিষয়ে চিন্তা করিতেন, বা বিশ্রামগৃহে উমেশচন্দ্র দত্ত মহাশয়ের নিকট জানিয়া লইতেন। পরে আসিয়া প্রশ্নকর্ত্তাকে জানাইয়া দিতেন।

 যতদূর জানা যায়, বরিশালে থাকিবার সময়েই তাঁহায় স্বাস্থ্য ভগ্ন হয়, এবং কৃষ্ণনগরে আসিয়াই তাঁহাকে কিছু দীর্ঘকালের জন্য ছুটী লইতে হয়। ছটী লইয়া তিনি কলিকাতার সন্নিকটে বালী উত্তরপাড়াতে ছিলেন। সেখান