পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ।
২৪৯

নানা প্রকার সামাজিক নিগ্রহ ও নির্য্যাতন সহ্য করিতে লাগিলেন। দেশমধ্যে মহা আন্দোলন উপস্থিত হইল। নবীন ব্রাহ্মগণ তাহাদের কার্য্যক্ষেত্র দিন দিন বিস্তৃত করিয়া তুলিতে লাগিলেন। প্রধানতঃ মনোমোহন ঘোষ ও কেশবচন্দ্র সেনের উৎসাহে ও দেবেন্দ্রনাথের অর্থসাহায্যে “ইণ্ডিয়ান মিরার” নামে এক সংবাদপত্র প্রকাশিত হইল; কলিকাতা কালেজ নামে এক উচ্চশ্রেণীর বিদ্যালয় স্থাপিত হইল, তাহা নবীন ব্রাহ্মদলের এক প্রধান আড্ডা হইয়া দাঁড়াইল; এবং সর্ব্ববিধ সদালোচনার জন্য ব্রাহ্মবন্ধু সভা নামে এক সভা স্থাপিত হইল। এই সময়ে অগ্রসর ব্রাহ্মদল স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের জন্য যাহা করিয়াছিলেন, তাহা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সমাজ সংস্কার বিষয়ে আলোচনা আরম্ভ হইলেই নারীজাতির উন্নতির প্রতি তাঁহাদের দৃষ্টি পড়ে। সংগতের অবলম্বিত প্রতিজ্ঞাগুলির মধ্যে নারীজাতির উন্নতিসাধনের চেষ্টা একটী প্রতিজ্ঞারূপে অবলম্বিত হয়। তদন্তুসারে নবীন ব্রান্ধগণ স্বীয় স্বীয় ভবনে, স্বীয় স্বীয় পত্নী, ভগিনী, কন্যা প্রভৃতির শিক্ষাবিধানে মনোযোগী হন। অনেকে সমস্ত দিন আফিসে গুরুতর শ্রম করিয়া আসিয়া সায়ংকালে স্বীর স্বীয় পত্নী বা ভগিনীর শিক্ষকতা কার্যো নিযুক্ত হইতেন। তদ্ভিন্ন ব্রাহ্মবন্ধু সভার সংশ্রবে একটা স্ত্রীশিক্ষাবিভাগ স্থাপন করিয়া অন্তঃপুরে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের নানা উপায় অবলম্বন করেন; এবং তাঁহাদের কয়েকজনে মিলিত হইয়া “বামাবোধিনী পত্রিকা” নামে স্ত্রীপাঠ্য একখানি মাসিক পত্রিকা বাহির করিতে আরম্ভ করেন। সে পত্রিকা অদ্যাপি রহিয়াছে। প্রথম সম্পাদকের পরিবারগণ এখনও তাঁহাকে রক্ষা করিতেছেন।

 ১৮৬৪ সালে ব্রাহ্মিকা-সমাজ নামে নারীগণের জন্য একটা স্বতন্ত্র উপাসনাসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়; এবং কেশবচন্দ্র তাহার আচার্য্যের কার্য্য করিতে থাকেন। ক্রমে নবীন ব্রাহ্মদলের মধ্যে এক অত্যগ্রসর দল দেখা দিলেন; তাঁহারা নারীজাতির উন্নতির জন্য পূর্ব্বোক্ত উপায় সকল অবলম্বন করিয়া সস্তুষ্ট রহিলেন না; কিন্তু আপনাপন পত্নীকে নববেশে সজ্জিত করিয়া প্রকাশ্যস্থানে গতায়াত করিতে আরম্ভ করিলেন তাহা লইয়া চারিদিকে মহাসমালোচনা আরম্ভ হইল। এই কালের শেষভাগে দেবেন্দ্রনাথের মধ্যম পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় আপনার পত্নীকে লইয়া গবর্ণর জেনেরালের বাড়ীতে বন্ধু-সম্মিলনে যান, তাহাতেও স্ত্রী-স্বাধীনতা বিষয়ক আন্দোলনকে দেশমধ্যে প্রবল করিয়া তুলিয়াছিল।

 ৩২