পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ।
২৫১

ঘটনা সকল সত্য কি না অনুসন্ধান করিবার সময় পাওয়া গেল না; নীলদর্পণ আমাদিগকে ব্যাপ্ত করিয়া ফেলিল; তোরাপ আমাদের ভালবাসা কাড়িয়া লইল; ক্ষেত্রমণির দুঃখে আমাদের রক্ত গরম হইয়া গেল; মনে হইতে লাগিল রোগ সাহেবকে যদি একবার পাই অন্য অস্ত্র না পাইলে যেন দাঁত দিয়া ছিড়িয়া খণ্ড খণ্ড করিতে পারি। এই নীলদর্পণকে অবলম্বন করিয়া লংএর কারাগার প্রভৃতির বিবরণ অগ্রেই দিয়াছি।

 মাইকেল মধুসূদন দত্ত, তাহার নাটক সকলে চিরন্তন রীতি ত্যাগ করিয়া যে নূতন পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন. দীনবন্ধু সেই পথে আরও অগ্রসর হইলেন। এই নুতন রীতি ইংরাজী শিক্ষিত ব্যক্তিগণের পক্ষে অতীব স্পৃহণীয় হইল। পর পরিচ্ছেদে মিত্র মহাশয়ের জীবন-চরিতে পাঠকগণ দেখিতে পাইবেন যে তিনি কর্ম্মসূত্রে নানা দেশে, নানা জেলাতে ভ্রমণ করিয়াছিলেন। শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের মধ্যে আর কেহ তাঁহার ন্যায় নানা স্থানে নানা শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে মিশিয়াছিলেন কি না সন্দেহ। তাঁহার এই ভূয়োদর্শন তাঁহার অঙ্কিত চরিত্র সকল সৃষ্টি করিতে সমর্থ হইয়াছিল। ইহার পরে দীনবন্ধু আরও যে সকল গ্রন্থ প্রণয়ন করেন তাঁহার বিবরণ তাঁহার জীবন-চরিতে দেওয়া গেল।

 দীনবন্ধু যেমন তাঁহার নাটকগুলির দ্বারা বঙ্গ সাহিতো নবভাব ও বাঙ্গালির মনে নবশক্তির সঞ্চার করিলেন, তেমনি এইকালের মধ্যে বঙ্গীয় সাহিতা জগতে আর এক প্রতিভাশালী পুরুষ দেখা দিলেন;—তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্গের অমরকবি মধুসূদন যেমন চিরাগত রীতি-পাশ ছিন্ন করতঃ বঙ্গীয় পদ্য সাহিত্যকে স্বাধীনতা মন্ত্রে দীক্ষিত করিয়া এক নব স্বাধীনতা, নব চিন্তা, নব আকাঙ্ক্ষা ও নবশক্তির অবতারণা করিলেন, গদ্য সাহিত্যে সেই কার্য্য করিবার জন্য বঙ্কিম চন্দ্রের অভ্যূদয় হইল। তৎপূর্ব্বে বিদ্যাসাগর মহাশয় ও অক্ষয় কুমার দত্ত মহাশয়ের নেতৃত্বাধীনে বাঙ্গালা গদ্য সংস্কৃত-বহুল ও সংস্কৃত ব্যাকরণের রীত্যনুসারী হইয়া ধনীগৃহের রমণীগণের ন্যায় অলঙ্কারভাবে প্রপীড়িত হইয়াছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের অভ্যুদয়ের পূর্ব্বেও একদল ইংরাজী শিক্ষিত কাব্যানুরাগী লোক এই সংস্কৃত ভাষাভারে পীড়িত বঙ্গভাষাকে কিরূপে উদ্ধার করিবার প্রশ্বাস পাইতেছিলেন, এবং কিরূপে তাঁহারা আলালী ভাষা নামে একপ্রকার তাজা তাজা বাঙ্গালা ভাষার সৃষ্টি করিয়াছিলেন, তাহা অগ্রেই লিখিয়াছি। সুপ্রসিদ্ধ প্যারীচাঁদ মিত্র ও রাধানাথ শিকদার যে এই নব ভাষার জন্মদাতা ছিলেন; এবং তাঁহাদের প্রকাশিত “মাসিক পত্রিকা যে এই ভাষার