পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রথম পরিচ্ছেদ।
১১

দারুণ দুর্ঘটনার পর গিরীশচন্দ্র একজন তান্ত্রিক ব্রহ্মচারীর প্ররোচনায় নিতান্ত সুরাসক্ত ও অমিতব্যয়ী হইয়া পড়েন। গিরীশচন্দ্র নিঃসন্তান হওয়াতে একটী দত্তক পুত্র গ্রহণ করেন ও তাহার নাম শ্রীশচন্দ্র রাখেন। এই দত্তক পুত্রকে জমিদারীর ভার দিয়া ১৮৪১ খ্রীষ্টাব্দে গিরীশচন্দ্র লোকান্তরিত হন। পূর্ব্বপুরুষদিগের ন্যায় এই রাজাও গুণিগণের উৎসাহদাতা, কাব্যরসামোদী ও সঙ্গীতাদির অভিজ্ঞ ছিলেন। ইঁহার অধিকার কালে, দিল্লীর প্রসিদ্ধ গায়ক কায়েম খাঁ ও তাঁহার তিন সুবিখ্যাত পুত্র মিয়া খাঁ, হস্মু খাঁ ও দেলাওর খাঁ অসিয়া কৃষ্ণনগরে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁহাদের আগমনে কৃষ্ণনগরে সঙ্গীত বিদ্যার চর্চ্চা বিশেষরূপে প্রবল হইয়াছিল। যুবরাজ শ্রীশচন্দ্র ইহাদেরই নিকটে গীতবাদ্য শিখিয়াছিলেন।

 শ্রীশচন্দ্র বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া বিষয় কার্য্যে মনোনিবেশ করিলেন। প্রথমে তিনি নষ্ট বিষয়ের পুনরুদ্ধারে মনোযোগী হইলেন। তৎপরে নদীয়া জেলাস্থ অনেক ভদ্রলোককে সমবেত করিয়া রাজবাটীতে এক সাধারণ হিতকরী সভা স্থাপন করিলেন; এবং স্বয়ং তাহার সভাপতি হইয়া কার্য্য নির্ব্বাহ করিতে লাগিলেন। এই সভার সাহায্যে রাজা একটী মহদুপকার সাধন করিয়াছিলেন। যে সকল ব্যক্তির নিষ্কর ভূমি বাজাপ্ত হইয়াছিল, ভূম্যধিকারিদিগের দ্বারা আবেদন করাইয়া তাহা প্রত্যর্পণ করিতে গবর্ণমেণ্টকে বাধ্য করিয়াছিলেন। ভূম্যধিকারিগণের এই মহদুপকার সাধন করিয়াই শ্রীশচন্দ্র নিরস্ত হন নাই। দেশের ও সমাজের সর্ব্ববিধ উন্নতিকর বিষয়ে মনোযোগী হইয়াছিলেন। তিনি প্রথমতঃ পণ্ডিতগণের সহিত স্মৃতি প্রভৃতি প্রাচীন গ্রন্থ সকল পাঠ করিয়া শাস্ত্রীয় বিধির দ্বারা বিধবা-বিবাহের বৈধতা প্রতিপন্ন করিতে প্রয়াসী হন। এরূপ শুনিতে পাওয়া যায়, নবদ্বীপের পণ্ডিতগণের প্রতিবন্ধকতা নিবন্ধনই সম্পূর্ণ কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।

 দেশে ইংরাজী শিক্ষা বিস্তার বিষয়েও শ্রীশচন্দ্র বিশেষ উৎসাহী হইয়াছিলেন। ১৮৪৫ খ্রীষ্টাব্দে, গবর্ণর জেনেরল সার হেনরি হার্ডিঞ্জ বাহাদুরের অধিকারকালে, কৃষ্ণনগর কালেজ প্রতিষ্ঠিত হইলে, শ্রীশচন্দ্র, পূর্ব্ব পুরুষের রীতি লঙ্ঘন পূর্ব্বক, স্বীয় পুত্রকে কৃষ্ণনগর কলেজে ভর্ত্তি করিয়া দিয়াছিলেন; এবং নিজে কলেজ কমিটীর সভ্যপদ গ্রহণ করিয়াছিলেন।

 ১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি রাজবাটীতে একটী ব্রাহ্ম সমাজ স্থাপন করেন; এবং তাঁহারই প্রার্থনানুসারে ভক্তিভাজন দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর মহাশয় হাজারিলাল