পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
দশম পরিচ্ছেদ।
২৬৩

হইতে পৃথক হইতে হয়। এই অবস্থাতে ঘোর দারিদ্র্যে পড়িয়া রাসবিহারী আরও ছয়ট কুলীন কস্তার পাণিগ্রহণ করেন; এবং অর্থোপার্জনের আশয়ে ময়মনসিংহের কোনও জমিদারের অধীনে তহসিলদারী কৰ্ম্মে নিযুক্ত হন।

 ঐ কাজ করিতে করিতে র্তাহার হৃদয় মনের পরিবর্তন উপস্থিত হয়। শুনিতে পাওয়া যায় বাল্যকাল হইতেই তাহার কবিতা রচনা করিবার ও গান বাধিবার বাতিক ছিল। তাহ দ্বারা প্রেরিত হইয়া তিনি বাঙ্গালী ভাষার চর্চা করিতে এবং কবিতাদি প্রণয়ন করিতে আরম্ভ করেন। উপযুপিরি কয়েকখানি কবিতাগ্রন্থ ও প্রণয়ন করেন, এবং তাহার কয়েকখানি শিক্ষাবিভাগেও আদৃত হয়। অবশেষে বিদ্যাসাগর মহাশরের সীতার বনবাস পাঠ কুরির র্তাহার হৃদয় নারীজাতির দুঃখে কাদিয়া উঠে; এবং শুনিতে পাওয়া যায় তিনি তাহার সারাংশ বাঙ্গাল কবিতাতে গ্রথিত করেন। এই সময় হইতে কুলীন কন্যাদিগের দুঃখের প্রতি র্তাহায় দৃষ্টি পড়ে এবং তিনি তাহাদেয় দুঃথ বর্ণনা করিয়া সংগীত রচনা পূৰ্ব্বক গ্রামে গ্রামে, কুলীনদিগের প্রধান প্রধান স্থানে, ভ্রমণ করিতে আরম্ভ করেন। “

 ১২৭৫ বঙ্গাব্দে তিনি আপনার হৃদগত ভাব “লল্লালী-সংশোধিনী” নামে একটা বক্তৃতাতে প্রকাশ করিয়া তাহা মুদ্রিত করলেন ! চারিদিকে আন্দোলন উঠিয়া গেল। এই নেশা তাহাকে দিন দিন এতই ঘিরিয়া লইতে লাগিল যে, তিনি আপনার তহসিলদারী কৰ্ম্ম আর রাখিতে পারিলেন না; সামান্ত গ্রন্থাদির আয়েয় উপর নির্ভর করিয়া দ্বারে দ্বারে সভা সমিতিতে ঐ একই কথা বলিয়া ফিরিতে লাগিলেন। প্রথম প্রথম ব্রাহ্মণ সমাজে তিনি সৰ্ব্বত্রই নির্যাতন ভোগ করিতে লাগিলেন; কিন্তু পরিণামে তাহার বিশুদ্ধচিত্তত ও চিত্তের একাগ্রত। দেখিয়া শিক্ষিত ব্যক্তিগণ র্তাহার পৃষ্ঠপোষক হইয়া উঠিলেন। “ঢাকা প্রকাশ” “হিন্দুহিতৈর্ষিণী” প্রভৃতি, এবং কলিকাতা হইতে পণ্ডিতবর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও “সনাতনধৰ্ম্মরক্ষিণী সভা” প্রভৃতি র্তাহার সপক্ষতা করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের উৎসাহে ও সাহায্যে বহুবিবাহ নিষেধ করিবায় জল্প গবর্ণমেণ্টেয় নিকট এক আবেদন প্রেমিত হয়, দুঃখের বিষয় তাহা কার্য্যে পরিণত হয় নাই।

 রাসবিচারী মুখোপাধ্যায় মহাশয় কেবল মুখে সমাজ সংস্কারের উপদেশ দিয়া নিরস্ত হন নাই। ১২৮২ সালে কুলের পর্যায় ভঙ্গ করিয়া নিজ কন্যায় বিবাহ দেন। তৎপরে ১২৮৪ সালে আবার মেল ভঙ্গ করিয়া স্বীয় পুত্র ও