পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একাদশ পরিচ্ছেদ।


 লাহিড়ী মহাশয় যখন রসাপাগলা হইতে বরিশাল ও বরিশাল হইতে কৃষ্ণনগরে বদলী হইয়া শারীরিক অসুস্থতা বশতঃ শিক্ষকতা কার্য্য হইতে অবসর গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলেন, সেই কালের মধ্যে বঙ্গসমাজে পাঁচটা প্রবল শক্তি দেখা দিল। ইহার আভাস পূর্ব্ব পরিচ্ছেদে কিঞ্চিৎ দিয়াছি। প্রথম শক্তি কেশবচন্দ্র সেনের অভ্যুদয়, দ্বিতীয় শক্তি দীনবন্ধু মিত্রের নাট্যকাব্যের অভ্যুদয়; তৃতীয় শক্তি বঙ্গসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের আবির্ভাব; চতুর্থ শক্তি সোমপ্রকাশের অভ্যুদয়; পঞ্চম শক্তি চিকিৎসা-জগতে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের অভ্যুদয়। পাঁচটা মানুষ, কেশবচন্দ্র সেন, দীনবন্ধু মিত্র, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ও মহেন্দ্রলাল সরকার এই কালের মধ্যে বঙ্গবাসীর চিত্তকে বিশেষরূপে অধিকার করিয়াছিলেন। এই পরিচ্ছেদে ইহাদের সংক্ষিপ্ত জীবন-চরিত দেওয়া যাইতেছে;—

কেশবচন্দ্র সেন।

 কেশবচন্দ্র সেন হুগলী জেলাস্থ গঙ্গাতীরবর্ত্তী গৌরীভা-নিবাসী ও কলিকাতার কলুটোলা-প্রবাসী স্বপ্রসিদ্ধ রামকমল সেন মহাশয়ের পৌত্র ও তাঁহার দ্বিতীয় পুত্র প্যারীমোহন সেনের দ্বিতীয় পুত্র। ১৮৩৮ সালের ৫ই অগ্রহায়ণ দিবসে কলুটোলাস্থ ভবনে ইঁহার জন্ম হয়। যাঁহারা প্যারীমোহন সেনকে দেখিয়াছেন, তাঁহারা বলেন যে তিনি দেখতে অতি সুপুরুষ ও পরম ভক্ত বৈষ্ণব ছিলেন। সর্ব্বাঙ্গে হরিনামের ছাপ, শান্ত, শিষ্ট, প্রসন্নমূর্ত্তি। কেশবচন্দ্র পিতার ভক্তিরভাব প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ইঁহার জননীদেবীও সদাশয়তা ও ধর্ম্মপরায়ণতার জন্য স্বপ্রসিদ্ধ ছিলেন। কেশবচন্দ্র এই পিতা মাতার ক্রোড়ে জন্মগ্রহণ করিয়া বাল্যাবধি শান্ত, শিষ্ট, সাধুতানুরাগী, হ্রীমান বালক ছিলেন। ইঁহার বয়ঃক্রম যখন অনুমান ছয় বৎসর তখন ইহার পিতামহের মৃত্যু হয়। ইহার পাঁচ বৎসরের মধ্যে পিতা প্যারীমোহন সেনও এলোক হইতে অবসৃত হন। কেশবচন্দ্রের বয়স তখন একাদশ বৎসর মাত্র ছিল। পিতৃবিয়োগের পর, জ্যেষ্ঠতাত হরিমোহন সেন ইঁহাদের অভিভাবক হন। তাঁহারই তত্ত্বাবধানের অধীনে-কেশবচন্দ্র বৰ্দ্ধিত হন।