পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৭৪
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ

র্তাহার নাম সুবক্তা ও বঙ্গসমাজের নেতাদিগের শীর্ষস্থানে উঠিয়া গেল। কিন্তু ইহাতে ধীশুখ্রষ্টের প্রতি যে প্রগাঢ় ভক্তি প্রদর্শন করিয়াছিলেন, তাহাতে দুইদিকে দুই প্রকার চর্চা উঠিল। গবর্ণর জেনারেল লর্ড লরেন্স হইতে আরম্ভ করিয়া সামান্ত কেটেকিষ্ট পৰ্য্যস্ত খ্ৰীষ্টানগণ কেশবচন্দ্র ত্বরায় খ্ৰীষ্টীয় ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিবেন বলিয়া বগল বাজাইতে লাগিলেন। অপরদিকে দেশীয় স্বধৰ্ম্মামুরাগিগণ কেশবচন্দ্রকে ও নবোদিত ব্ৰাহ্মদলকে খ্ৰীষ্টীয়ান বলিয়া এগালি দিতে লাগিলেন। কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের সভ্যগণ এই আন্দোলনে যোগ দিলেন। এত অতিরিক্ত খ্ৰীষ্টভক্তি তাঁহীদের চক্ষে ব্রাহ্মধৰ্ম্মের বিকার ৰলিয়া প্রতীতি হইল। ব্রাহ্মদিগের সেই যে খ্ৰীষ্টীয়ান অপবাদ উঠিয়াছে, তাহা আজও যায় নাই। যদিও তৎপরবর্তী সেপ্টেম্বর মাসে কেশবচন্দ্র Great Men নামক আর একটা বক্তৃতা করিরা নিজের খ্ৰীষ্টীয়ান অপবাদ কতকটা দূর করিবার প্রয়াস পাইলেন বটে, তথাপি সে অপবাদ সম্পূর্ণ গেল না। এ অপবাদের আর একটু কারণ আছে। এই ১৮৬৬ সাল হইতে, চৈতন্তের প্রভাবের আবির্ভাব পর্যন্ত, কয়েক বৎসর কেশবচন্দ্রের দলভুক্ত ব্রাহ্মগণ যিশুখ্ৰীষ্টকে লইয়া কিছু বাড়াবাড়ি করিয়াছিলেন। বড়দিনের দিন যিশুর ধ্যানে দিনযাপন করা, যিশুর নামে সঙ্গীত রচনা করা, উঠিতে বসিতে যিশু কীৰ্ত্তন করা, অন্তান্ত ধৰ্ম্মশাস্ত্র অপেক্ষা গ্ৰীষ্টীয় শাস্ত্র অধিক অনুশীলন করা প্রভৃতি চলিয়াছিল। সুতরাং লোকের ও প্রকার সংস্কার স্বাভাবিক। এদিকে যুবক ব্রাহ্মদলের কার্য্যক্ষেত্র দিন দিন বিস্তৃত হইলে লাগিল। তাঁহাদের প্রচারকগণ তখন উৎসাহের সহিত মফঃস্বলের নানা স্থানে ভ্রমণ করিয়া নব নব সমাজ প্রতিষ্ঠিত করিতে লাগিলেন। ক্রমে এই সকল সমাজকে একতাস্থত্রে আবদ্ধ করা প্রয়োজন হইতে লাগিল। চারিদিক হইতে অনেক ব্রাহ্ম ও ব্রাক্ষিক একটা স্বতন্ত্র সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরোধ করিতে লাগিলেন। অবশেষে এই সালের ১১ই নবেম্বর দিবসে উন্নতিশীল ব্রাহ্মদলের এক সভাতে “ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ” নামক এক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হইল।

 উন্নতিশীল ব্রাহ্মদল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথকে আপনাদের ভক্তি ও কৃতজ্ঞতাস্বচক এক অভিনন্দন পত্র দিয়া এবং তঁহার আশীৰ্ব্বাদ গ্রহণ করিয়া, নবপ্রতিষ্ঠিত সমাজের কার্য্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিলেন। এই সময় হইতে কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের নাম পরিবর্তিত করিয়া আদি ব্রাহ্মসমাজ রাখা হইল।

 ১৮৬৭ সাল হইতে যুবকলের প্রচারোৎসাহ আগুনের ন্যায় জলিয়া উঠিল।